ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে করোনার দুই বছর পর খুলেছে সোনারগাঁয়ের পর্যটন স্পটগুলো ও বিনোদন কেন্দ্র। ঈদকে কেন্দ্র করে এবার সবাই বেশ কিছুদিন ছুটি পেয়েছেন। সারা বছর কাজের মধ্যে থাকা হলেও বছরের এই সময়টাতে একটু ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করে সকলে। আর তাই ঈদের এই অবসর সময়টুকু কাটুক সোনারগাঁয়ের বিনোদন ও পর্যটন স্পটগুলোতে।
ঈদ উপলক্ষ্যে দুই বছর পর খুলে যাওয়া এসব স্পট এবার দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছে। ইতোমধ্য ঈদকে কেন্দ্র করে শেষ হয়েছে ধোয়মোছার কাজ। করা হয়েছে রঙ ও আলোকসজ্জা।
সব সময় ঈদে ভিড় হয় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী ‘বাংলার তাজমল’, ‘সোনারগাঁও জাদুঘর’ (বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন) ও পানাম নগরী। তবে গত দুই বছর করোনার কারণে একেবারে বন্ধ ছিল এ স্পটগুলো। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার তিনটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান এগুলো।
এক সময়ের প্রাচীন বাংলার স্বাধীন রাজধানী সোনারগাঁও উপজেলার এসব স্থান স্থানীয় ও আশপাশের জেলার মানুষকে আকর্ষণ করে। অন্যবারের মতো এবারের ঈদেও এ দুটি স্থানে দেশি-বিদেশি রেকর্ডসংখ্যক দর্শনার্থী সমাগম ঘটবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আর এজন্য এসব দর্শনীয় স্থানে নেওয়া হয়েছে নানা আয়োজন। চলছে শেষ মুহূর্তের ধোয়া মোছা ও পরিচর্যার কাজ।
বাংলার তাজমহল ও সোনারগাঁও জাদুঘর ছাড়াও প্রাচীন নগরী ‘পানাম’, আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী উপজেলার মেঘনা নদীর পাড়, রূপগঞ্জে বেসরকারিভাবে নির্মিত কয়েকটি পার্কেও মানুষের ভিড় থাকতে পারে।
সোনারগাঁও জাদুঘর
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনটি সোনারগাঁও জাদুঘর হিসেবেই পরিচিত। রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে। ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক রবিউল জানান, এবার ফাউন্ডেশনকে সাজানো হয়েছে ভিন্ন সাজে। হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জা। ঈদের ছুটিতে জাদুঘরে আগত হাজার হাজার দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জাদুঘরে আসার প্রবেশ পথে যানজট নিরসনে পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জাদুঘরের বিভিন্ন অংশে শেষ হয়েছে ধোয়া মোছার কাজ।
সোনারগাঁও এক সময় মসলিনের জন্য জগৎ বিখ্যাত ছিল। মসলিনের বিকল্প জামদানি শাড়ি সরাসরি তৈরি করতে দেখা যাবে কারুপল্লীর ভেতরে। এখানে দেখার মতো রয়েছে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন জাদুঘর এবং ফাউন্ডেশন চত্বর। লেকঘেরা ফাউন্ডেশন চত্বরে রয়েছে কারুপল্লি, নৌকা ভ্রমণ ও টিকিট কেটে মাছ ধরার ব্যবস্থা।
বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈসা খাঁ দীর্ঘদিন সোনারগাঁও শাসন করেছেন। সোনারগাঁওয়ের চারদিকে নদী দিয়ে ঘেরা ছিল বলে সহজে সোনারগাঁওকে কোনো শত্রু আক্রমণ করতে পারতো না। ১৯৭৫ সালে এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা, আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১শ টাকা।পানাম নগরী। ছবি: বাংলানিউজলোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গোয়ালদী গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক পানামনগর। পানামনগরের পাশেই রয়েছে ঐতিহাসিক পানাম পুল। যারা জাদুঘর দেখতে আসেন তারা সাধারণত একটি বারের জন্য ঢুঁ মেরে যান পানাম নগরীতে।
বাংলার তাজমহল
২০০৮ সালে সোনারগাঁওয়ের মতো অজপাড়া গায়ে ভারতের আগ্রার তাজমহলের আদলে নির্মিত “বাংলার তাজমহল” এর ফটক সকলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। বিভিন্ন স্থানে বসানো টাইলস, বিদেশি ডায়মন্ড ও পাথর, গম্বুজের ওপরে ব্রোঞ্জের তৈরি চাঁদ-তারায় আরো দৃষ্টিনন্দন বাংলার তাজমহল। প্রবেশ মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ৫০ টাকা।
চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক আহসানউল্লা মনি নিজস্ব অর্থে পেরাব গ্রামে নিজ বাড়িতে ১২ বিঘা জমির ওপর তাজমহলটি নির্মাণ করেন।
তিনি জানান, তাজমহলে ব্যবহৃত টাইলস আনা হয়েছে ইতালি থেকে। বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ১৭২টি বিদেশি ডায়মন্ড, পাথর। গম্বুজের ওপরে চাঁদ-তারা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে চার মণ ওজনের ব্রোঞ্জ।
মনি জানান, সম্রাট শাহাজাহান তার প্রিয়তমা স্ত্রীর সমাধির ওপর ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ তাজমহল নির্মাণ করেন। যা বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সময়ের আবর্তে তাজমহলটি এখন বিশ্ববাসীর ভালবাসার মহান স্মৃতির চিহ্ন বহন করছে। এ কারণেই দেশের সাধারণ মানুষ যারা তাজমহল দেখতে ভারতের আগ্রায় যেতে পারবেন না তারা অনায়াসেই বাংলার তাজমহলটি দেখতে পারবেন। পানাম নগর
পানাম নগরী
বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ের পানাম নগরী বীর ঈশা খাঁর সময়কালে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। সোনারগাঁয়ের রাজকার্য পরিচালিত হতো পানাম নগরী থেকে। বর্তমানে যে পানাম দাঁড়িয়ে আছে তার অবকাঠামো ব্রিটিশ আমলের। প্রাচীন পানাম চাপা পড়ে আছে আধুনিক পানামের নিচে।
এখানে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য অট্টালিকা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুরঘর, গোসলখানা, নাচ ঘর, খাজাঞ্চিখানা, টাকশাল, দরবার কক্ষ, প্রশস্ত দেয়াল, ভোজনালয়, বিচারালয়, প্রমোদ কুঞ্জ ইত্যাদি।পানাম নগরী।
পানাম নগরীতে দেখা যায় চারশ’ বছরের পুরনো মঠ-বাড়ি। এর পশ্চিমে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কুঠি ‘নীলকুঠি’ রয়েছে। আছে পোদ্দার বাড়ি, কাশিনাথের বাড়ি, সোনারগাঁয়ের একমাত্র আর্টগ্যালারিসহ নানা প্রাচীন ভবন। পানামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খিরাজ খাল। শেরশাহ আমলে নির্মিত সোনারগাঁ থেকে সিন্ধু পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মাইলের ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড-ট্রাংক রোডের কিছু অস্তিত্ব পানামে আজো দৃষ্ট হয় বলে হাল আমলে তা পাকা করা হয়।