মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫

|

চৈত্র ১৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জের সাকিব খানের মেগাস্টার হয়ে উঠার গল্প

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ২৯ মার্চ ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সাকিব খানের মেগাস্টার হয়ে উঠার গল্প

ফাইল ছবি

প্রায় দুই দশক ধরে ঢালিউড সিনেমার রাজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রেখেছেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক পরিশ্রম করে আজকের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছেন নারায়ণগঞ্জের এ অভিনেতা। ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে শুরু হয়েছিল তার পথ চলা, জানেন?

শাকিব খানের প্রকৃত নাম মাসুদ রানা। তার বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী। মা গৃহিণী। তারা এক ভাই ও এক বোন। তার শৈশব কেটেছে নারায়ণগঞ্জে।

ছোটবেলায় ছাত্র হিসেবে মেধাবী ছিলেন মাসুদ। বড় হয়ে হতে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। তবে অভিনয় আর নাচের প্রতিও বেশ আগ্রহ ছিল তার। সে আগ্রহ থেকেই সুযোগ ঘটে ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার।
 
নাচের প্রতি ভালোবাসা থেকে ১৯৯৫ সালে নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজার অধীনে একটি ড্যার্ন্সিং কোর্স সম্পন্ন করেন মাসুদ। এরপরই ১৯৯৮ সালে জীবনে পেয়ে যান বড় একটি সুযোগ।
 
সে বছর নায়ক নায়িকাদের কাছ থেকে দেখতে নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজার সঙ্গে এফডিসি ঘুরতে যান মাসুদ। আর তখনই এক ফটোগ্রাফারের নজরে পড়েন। তৎক্ষণাত একটি ফটোশুটে অংশ নিতে বললে নতুন অভিজ্ঞতা পেতে রাজি হয়ে যান নারায়ণগঞ্জের অখ্যাত সে যুবক।
 
ফটোশুটের সময় পরিচালক আবুল খায়ের বুলবুলের নজরে পড়েন মাসুদ। তিনি প্রস্তাব দেন তার চলচ্চিত্রে অভিনয় করার। বিভিন্ন কারণে শেষ পর্যন্ত সে চলচ্চিত্রটি আর নির্মিত হয়নি।
 
এরপর ১৯৯৮ সালে আফতাব খান টুলু পরিচালিত ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ সিনেমায় অভিনয় করার প্রস্তাব পান মাসুদ। এ চলচ্চিত্রের মাধমেই প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান তিনি। তবে এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি নিয়ে তখন জটিলতা তৈরি হয়।
 
ঠিক সেই সময় খ্যাতিমান নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান চিত্রনায়ক শাকিল খানের সঙ্গে বিবাদের কারণে তার নতুন সিনেমার জন্য একটি নতুন মুখ খুঁজছিলেন। তখন নৃত্য পরিচালক আজিজ রেজা নির্মাতা সোহানকে মাসুদের কথা বলেন।
 
১৯৯৯ সালে সোহান মাসুদকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘অনন্ত ভালোবাসা’ নামের একটি সিনেমা। এ সিনেমা আফতাব খান টুলু পরিচালিত ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ সিনেমার আগেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।
 
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সিনেমা হলেও রুপালি জগতে ‘অনন্ত ভালোবাসা’ দিয়েই ঢালিউডে অভিষেক ঘটে মাসুদের। পর্দায় তার নাম মাসুদ রানা বদলে রাখা হয় শাকিব খান।
 
মাত্র ৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিকে ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাকিব। এ সিনেমায় শাকিবের বিপরীতে অভিনয় করেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মৌসুমীর বোন ইরিন জামান।
 
প্রথম সিনেমা দিয়ে দর্শক হৃদয়ে তেমন দাগ কাটতে পারেননি। ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে অভিনয় জীবনের দ্বিতীয় বছরে শীর্ষ অভিনেত্রী শাবনূরের বিপরীতে ‘গোলাম’ সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ পান। এরপরই আলোচনায় আসেন এ অভিনেতা।

একে একে দুজন দুজনার, বিষে ভরা নাগিন, শিকারী, স্বপ্নের বাসর, মায়ের জেহাদ, রাঙ্গা মাস্তান, হিংসার পতন, বন্ধু যখন শত্রু’র মতো জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেন। দর্শকপ্রিয়তায় কখনও সফল আবার কখনও ব্যর্থতার মুখ দেখে তার সিনেমা।
 
এরপর চিত্রনায়ক মান্নার মৃত্যুর পর চলচ্চিত্র যখন থমকে যাওয়ার উপক্রম, তখনই হঠাৎ করে জ্বলে ওঠেন শাকিব। ২০০৬ সালে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের সঙ্গে জুটি গড়ে অভিনয় করেন ‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমায়। সে সিনেমার পরই ঢালিউড সিনেমায় ধীরে ধীরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন শাকিব খান।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এ অভিনেতা পেয়েছেন চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আটটি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, তিনটি বাচসাস পুরস্কার ও চারটি সিজেএফবি পারফরম্যান্স পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার। বর্তমানে এ মেগাস্টারের জনপ্রিয়তা শুধু দেশেই আটকে নেই। টালিউডেও দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন গুড লুকিংয়ের এ অভিনেতা।
 
অভিনয়জীবনে সফল হলেও ব্যক্তিজীবনে শাকিব কিছুটা সমালোচিত। অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে জড়ালেও শেষ পর্যন্ত কোনো সম্পর্কই তার টেকেনি। দুই অভিনেত্রীর সঙ্গে আর দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। সম্পর্ক না টিকলেও বাবা হিসেবে দুই সন্তানকেই ভালোবাসেন ঢালিউডের এ মেগাস্টার।