সাইফুল ইসলাম স্বপন
নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রাত ১০ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় স্বপনকে। গ্রেপ্তারকৃত সাবেক চেয়ারম্যান স্বপনরে বিরুদ্ধে আড়াইহাজাওে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ডজনখানেক খুনসহ, হত্যা ও ধর্ষণসহ বিস্তুর অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তারেক আল মেহেদী জানান, গ্রেপ্তারকৃত সাইফুল ইসলাম স্বপনের বাড়ি আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের খাইল্লারচর গ্রামে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত দুই জনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত সাবেক ওই চেয়ারম্যানন। সে ফতুল্লার দক্ষিণ সস্তাপুর এলাকায় তার শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছে। বিষয়টি সোর্স মারফত নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১০ টায় ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করি।
তিনি আরও জানান, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে দায়েরকৃত দুটি হত্যা মামলার আসামি সে। তার বিরুদ্ধে আরও কোন মামলা আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে জেলা আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত সাবেক চেয়ারম্যান স্বপন নারায়ণগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য দ্বাদশ সংসদীয় সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্ঠ লোক হিসাবে পরিচত। ২০১০ সাল থেকে গত ১৪ বছর ধরে আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যা, ডাকাতি, মারামারি সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১২-১৩ টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর পেছনে সাবেক এই চেয়ারম্যান স্বপনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ।২০২০ সালের ২৭ মে বিকালে কালাপাহাড়িয়া গ্রামে গুলিবিদ্ধ হয়ে আয়ুব আলী (১৪) নামে এক স্কুল ছাত্র মারা যায়। সে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইজারকান্দী পূর্বপাড়া এলাকার মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে এবং স্থানীয় কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি স্থানীয় আলোর সেতু নামে একটি পাঠাগার দেখাশোনার দায়িত্বেও ছিল। মৃতের পরিবারের অভিযোগ কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তাকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে। এতে তার মৃত্যু হয়। মৃতের মা আয়েশা বেগম বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। চেয়ারম্যান স্বপনের আর্শিবাদপুষ্ট নিষিদ্ধ সংগঠন তৎকালীন ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করাসহ অজ্ঞাত আরো ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এক কলেজ ছাত্রের হাতের কব্জি কাটার এক মামলায় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে আসামি করা হয় যার মামলা নং ১৬(২)২০২০ইং। ২০১০ সালের ২৩ মার্চ একই দিন পৃথক সময় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি সালামকে হত্যা করা হয়। পরের দিন আওয়ামী লীগ নেতা লাল মিয়াকে হত্যা। ২০১২ সালের ফিরোজ ও কাঁঠমিস্ত্রী রব মিয়া হত্যা। ২০১৫ সালে খালিয়ার চর গ্রামের প্রবাসী রাসেল হত্যা। ২০১৫ সালে পূর্বকান্দী গ্রামের মাদ্রাসার ছাত্রী শারমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা। ২০১৪ সালে পূবকান্দী গ্রামের যুবলীগ নেতা রব মিয়া হত্যা। একই সালে কদমির গ্রামে আমান হত্যা ও পূর্বকান্দী গ্রামে তোফাজ্জল হত্যা। ২০১৬ সালে খালিয়ার চর গ্রামের যুবলীগ নেতা ডালিম হত্যা। ২০১৭ সালে কালাপাহাড়িয়া এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মাহমুদ সুমন হত্যা। এ মামলায় চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনকে আসামি করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে অহিদুর রহমান ওরফে পরশিদ হত্যা মামলা। এসব হত্যাকান্ডে বিভিন্ন সময় সাবেক চেয়ারম্যান স্বপনরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদের বিষয় উঠে এসেছে।