ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ শেখ রাসেল পার্ক। শহরের বুকে গড়ে উঠা এ পার্কটি এত পরিস্কার ও সুন্দর যে এটি দেখে যে কারো ক্লান্তি দূর হয়ে যাওয়া সম্ভব। এখানে এসে অনেকেই নিজেদের ক্লান্তির অবসান ঘটায়, করে শরীর চর্চাও।
পার্কের দর্শনার্থী আরমান হোসেন বলেন, এ পার্কটি আমাদের কাছে খুবই ভালো লাগে। এটি আগে লেক ছিলনা, এখানে ছিল ঘনবসতি, বস্তি ও ময়লা ফেলার স্থান। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আইভি নির্বাচিত হবার পর এটি পরিকল্পনা করে তৈরি করেছেন। এখানে মানুষ এখন সময় কাটাতে পারে।
পরিবেশবান্ধব ঘনসবুজ ঘেরা ছায়া ঢাকা, নির্মল পানি সমৃদ্ধ লেক বেষ্টিত জীমখানাস্থ শেখ রাসেল পার্ক এখন নগরীর অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এর আয়তন প্রায় ১৮ একর। বর্তমান লেকটি একদা পরিত্যাক্ত জলাশয়/ডোবা ছিল। প্রতিনিয়ত মানুষের বর্জ্য ফেলার কারণে লেকটি ডাম্পিং স্থান ও মশা মাছির প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়। এছাড়াও অবৈধ দখলের ফলে জীমখানা লেক এলাকার পাশে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনাগুলো মাদক ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ফলে লেক এলাকাটির আশেপাশে দূষণ ও অসামাজিক কর্মকান্ডের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক ২০১০ সালে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) লেকটি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জনগণের দীর্ঘ দিনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ২০১১ সালে জিমখানা লেক খনন, সংস্কার ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং স্বনামধন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লি. এর মাধ্যমে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
এ নয়নাভিরাম কাজটি শেখ রাসেল পার্ক হিসেবে নামকরণের জন্য গত ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট বরাবর আবেদন করা হয় এবং সেপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট দপ্তর হতে অনুমোদন পাওয়া যায়। পার্কটি নারায়ণগঞ্জ নগরবাসীর একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিপুল সংখ্যক লোক এখানে প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ উপভোগ করার জন্য আগমন করে। লেকটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৭০ মিটার, প্রস্থ ৭৫ মিটার। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে শেখ রাসেল পার্কটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৫৭ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে, স্ট্রীট লাইট, সিটিং পেভেলিয়ন ও পরিবেশ বান্ধব সবুজ গাছ-পালা রোপন করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের অবসর সময় কাটানোর জন্য ৪টি ভিউইং ডেক ও ৬টি ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে।
উন্মুক্ত পরিবেশে যে কোন ধরণের অনুষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। লেকটির সৌন্দর্যবর্ধন করে দাঁড়িয়ে আছে শেখ রাসেলের ম্যুরাল। লেক এর দুই পাশে লোকজনের পারাপারের জন্য রয়েছে একটি নয়নাভিরাম ব্রিজ । খেলাধুলার জন্য ১টি খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া পাবলিক টয়লেট (পুরুষ ও মহিলা) এর কাজ চলমান আছে। অবশিষ্ট কাজের মধ্যে রয়েছে, বোট ক্লাব, সুইমিং পুল, ওয়াটার গার্ডেন, জিমন্যাস্টিক ক্লাব, ড্রাই ফাউন্টেন, স্কেটিং জোন, সাইকেল লেনসহ সৌন্দর্যবর্ধন কাজ। এছাড়াও পার্কের অভ্যন্তরে শিল্প সংস্কৃতি চর্চ্চা ও বিকাশের লক্ষ্যে বিদ্যমান চারুকলা ভবনটির স্থলে নতুনভাবে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি পরিবেশ বান্ধব চারুকলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
সর্বোপরি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর পরিবেশ উন্নয়নসহ নগরবাসীর দীর্ঘ দিনের বিনোদন কেন্দ্রের চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়া লেকটি অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি ধারণের জন্য সংরক্ষিত জলাধার (রিটেনশন পুকুর) হিসেবে কাজ করবে। অপরদিকে অগ্নি নির্বাপনের জন্য পানি সরবরাহের একমাত্র প্রধান উৎস হিসেবে এ লেকটি মূখ্য ভূমিকা পালন করবে। প্রায় মৃত জিমখানা লেকটিকে সংরক্ষণ ও সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমানে নগরবাসীর একঘেয়েমি জীবনমানের পরিবর্তন ও প্রাণোজ্জল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।