মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫

|

চৈত্র ১৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ঈদে ব্যস্ততা বেড়েছে নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারিপল্লিতে, ৫০০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ২৪ মার্চ ২০২৫

ঈদে ব্যস্ততা বেড়েছে নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারিপল্লিতে, ৫০০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল ফিতর সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের শতবর্ষী নয়ামাটি হোসিয়ারিপল্লিতে পোশাক তৈরি ও বিক্রিতে ব্যস্ততা বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা হোসিয়ারি মার্কেটে পোশাক কিনতে আসেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে বেচাবিক্রি। এবার ৫০০ কোটি টাকা বেচাবিক্রির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। গতবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন পাইকারেরা।

এবারের ঈদে নয়ামাটি-উকিলপাড়ার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্রক, বাবা সেট, গেঞ্জি সেট, সূতি ওয়াশের জামা, চায়না জর্জেট, বড়দের গেঞ্জি, স্যান্ডো গেঞ্জি, টি-শার্ট ও এমব্রয়ডারি করা পোশাকের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া অন্তর্বাস, মাথার টুপি, ট্রাউজারসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১০০ বছর আগে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে শহরের নয়ামাটি এলাকায় হোসিয়ারিপল্লি গড়ে ওঠে। পরে নয়ামাটি থেকে তা উকিলপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। হোসিয়ারিপল্লি ঘিরে গড়ে ওঠে হোসিয়ারি মার্কেট। এখান থেকে রাজধানীর সদরঘাট, বঙ্গবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা বয়সী মানুষের পোশাক সরবরাহ করা হয়। নয়ামাটি-উকিলপাড়ায় পাঁচ হাজারের মতো হোসিয়ারি কারখানা আছে। এসব কারখানায় লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। কারখানায় পোশাক উৎপাদন ও বিক্রি দুটোই একসঙ্গে হয়। সারা বছর পোশাক বিক্রির অর্ধেকের বেশি হয় ঈদের মৌসুমে।

নয়ামাটির বিক্রমপুর হোসিয়ারি মার্কেটের ‘অর্পিতা হোসিয়ারিতে’ এবারের ঈদে এক থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের পোশাক তৈরি হচ্ছে। তাদের অ্যাংকর কাপড়ের গেঞ্জির চাহিদা বেশি। প্রতি ডজন শিশুদের পোশাক ৯৬০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, ফ্রক প্রতি ডজন ১ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

অর্পিতা হোসিয়ারির ব্যবস্থাপক সাকিল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, সুতি ও নিট কাপড়ের গেঞ্জির চাহিদা বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এসে পোশাক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় এবার পোশাকের দাম একটু বেশি। আগামী ২৫ রোজা পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে। সামনের দিনগুলোতে ভালো বেচাকেনা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

নয়ামাটিতে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন কুমিল্লার হোমনা এলাকার ব্যবসায়ী জয় হরি দেবনাথ। গতবারের তুলনায় এবারের ঈদে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে বলে তিনি জানালেন। শিশুদের সুতি কাপড়ের জামা, গেঞ্জি, ফ্রক, ফতুয়া বেশি চলছে। জয় হরি দেবনাথ বলেন, ‘ঈদে টার্গেটের চেয়ে ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। চাঁদরাত পর্যন্ত ঈদের বেচাকেনা হবে।’

বৃষ্টি হোসিয়ারির মালিক আবদুল হাই বলেন, মোটামুটি ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা আসছেন। এবার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম বেচাকেনা হয়েছে। সামনের কয়েক দিনের বেচাকেনার ওপর তাঁদের ব্যবসা নির্ভর করবে।

১৫ বছর ধরে চট্টগ্রামে কাপড়ের ব্যবসা করেন শাহাদত আলী। নিজের দোকানের জন্য পোশাক কিনতে নয়ামাটিতে এসেছেন। ১০ রোজার পর থেকে বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। ঈদের জন্য তিন দফা নয়ামাটিতে মাল কিনতে এসেছি।’

বেচাকেনা ভালো হচ্ছে জানিয়ে ফাতেমা টেক্সটাইলের মালিক নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে আগের দামেই আছে। আমরা কম লাভে বেশি পোশাক বিক্রি করছি। পাইকারেরা আমাদের কাছ থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে মাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

নয়ামাটি হোসিয়ারিপল্লি শুরুতে গড়ে উঠেছিল সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি, হাফহাতা গেঞ্জি ও অন্তর্বাস দিয়ে। ধীরে ধীরে ব্যবসার পোশাকের ধরন বাড়তে থাকে। ১৯৫৮ সাল থেকে স্যান্ডো গেঞ্জির ব্যবসা করা অসীম টেক্সটাইল প্রতি ডজন স্যান্ডো গেঞ্জি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, হাফহাতা গেঞ্জি প্রতি ডজন ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি করছে।

অসীম টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী তাপস সাহা প্রথম আলোকে বলেন, শুধু ঈদ নয়, তাদের গেঞ্জির চাহিদা সব সময়। অন্য পোশাকের দাম বাড়লেও তাদের গেঞ্জির দাম বাড়েনি। বাপ-দাদার ব্যবসা তাঁরা ধরে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘পাইকারেরা নিজেরা এসে মাল নিয়ে যান। আবার অনেক পাইকার আসেন না। তাঁরা অর্ডার দিয়ে দিলে কুরিয়ারে মাল পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে টার্গেটের তুলনায় এবার কম গেঞ্জি বিক্রি হয়েছে।’

হোসিয়ারি ব্যবসায়ীরা জানান, পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত কাপড়, সুতা, বোতাম, প্যাকিং পলিথিন, বোর্ড, সুইসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় পোশাকের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমিকের মজুরিও বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ব্যবসা বাড়েনি।

ঈদে ৫০০ কোটি টাকার পোশাক বিক্রির আশা করছেন বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আবদুস সবুর (সেন্টু)। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত শীতের অনেক পোশাক এখনো বিক্রি করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। সংকটের মধ্যেও ব্যবসা চলছে। সামনের কয়েক দিনে ব্যবসার অনেক কিছু নির্ভর করছে।

সুত্রঃ প্রথম আলো