ফুল চাষ
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া এলাকা ফুল চাষের জন্য জনপ্রিয়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে ব্যবসার টার্গেট করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। এবার সেই টার্গেটে কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশা ফুল চাষিদের।
চলছে ফেব্রুয়ারি মাস। এ মাসের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ের ছক কষেছেন ফুল চাষিরা। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায় এ ফুল।
শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার সাবদী এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে যেখানেই চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। চারিদিকে ফুটে আছে গাঁদা, জারবেরা, জিপসি, গ্লাডিওলাস, ডালিয়া, কাঠ মালতী, কামিনী, বেলি, জবা, গন্ধরাজসহ বিভিন্ন রঙের প্রায় ২৫ প্রজাতির ফুল।
এখানে সকাল থেকে ফুল বাগানগুলো দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তারা ফুল বাগান দেখার পাশাপাশি মেতে উঠেন ছবি তুলতে। এ সময় চাষিরা তাদের সতর্ক করছেন, ফুল ছিঁড়েন না ও বাগান নষ্ট করবেন না। বিভিন্ন সময়ে দর্শনার্থীরা অসতর্ক থাকলেও এবার এ ব্যাপারে তাদের সতর্কতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাষিরা।
বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী, ফেলারদী, আখতলা, মুখ কলদী, দীঘলদী, মাধবপাশা, আরজাদি, শেলসারদী ও বন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীবাড়ি, চিনারদী, মোল্লাবাড়ি, কলাবাগ, নবীগঞ্জ, তিনগাঁও এলাকায় বিভিন্ন জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন চাষিরা।
প্রতিটি বাগানে ফুল চাষিদের ফুলগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করতেও দেখা গেছে।
কৃষকরা জানান, এ বছর ফুলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে তবে তাতে তারা খুশি। এবার ভালো দামের প্রত্যাশা তাদের।
তারা জানান, এবার ফুলের সব বাগান হয়তো ১৪ ফেব্রুয়ারির বাজার ধরতে পারবে না কারণ অনেক ফুল এখনো পরিপক্ক হয়নি। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী টার্গেট রয়েছে তাদের। চাষাবাদ আরেকটু আগে শুরু করতে পারলে এবার পুরোপুরি টার্গেট সম্পন্ন হতো ব্যবসায়ীদের।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৮০ সালে গাঁদা ফুল, কাঠ মালতী ফুল দিয়ে এ উপজেলার সাবদী এলাকায় ফুলের চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে ব্যবসা প্রসারিত হয়ে এখন ফুল চাষ করে স্থানীয় লোকজন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।
সাবদী এলাকার ফুল চাষি রহিম মিয়া জানান, এবার ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা ভালো ফলন পেয়েছি। ফুলের বাগানগুলো এখন ফুলে ফুলে ভরা, ছড়াচ্ছে সুভাষ। আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন। অনেক চাষি বাগানসহ ফুল বিক্রি করে ফেলেছেন। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর থেকে ব্যবসায়ীরা ফুল নিয়ে যাওয়া শুরু করবেন। এবার পুরো উপজেলা মিলিয়ে কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা । তবে অনেক বাগান এবার হয়তো ১৪ ফেব্রুয়ারির বাজার ধরতে পারবে না। কারণ অনেকে চাষাবাদ দেরিতে শুরু করেছেন।
তিনি জানান, প্রতি বছর দর্শনার্থীরা এসে বাগান নষ্ট করে থাকেন। তবে এবার তা করছেন না। এবার দর্শনার্থীরা সচেতন থাকায় আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি।
বন্দর উপজেলা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তোফায়েল হাসান বাংলানিউজকে জানান, এবার কৃষকদের কথা অনুযায়ী চাষাবাদ গত বছরগুলোর তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে। তবে ফুলের বাজারে তো দাম উঠানামা করে। আর ফেব্রুয়ারিতে ফুলের ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসেবে এবার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। ফুল চাষিদের হিসাব অনুযায়ী এবার তাদের ৪০ লাখ টাকার ওপরে লাভ হতে পারে। তবে আশা করছি এবার ফুলের ব্যবসা ভালো হবে।