বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

|

অগ্রাহায়ণ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ভালোবাসার জন্য একটু নত হতে দোষ নেই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৭:১১, ১৮ নভেম্বর ২০২৩

ভালোবাসার জন্য একটু নত হতে দোষ নেই

মারুফ কামাল খান

স্বামী-স্ত্রী দু'জনেই পরম প্রিয়ভাজন আমার। দু'জনেই মেধাবী। স্বীয় অঙ্গনে পরিচিত ও নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত। ফেসবুকে দু'জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। দু'জনেই পরষ্পরের প্রতি খুব আক্রমণাত্মক। একজন স্ট্যাটাস দেয়, তো আরেজন দেয় তার তীক্ষ্ণ জবাব। এ করেই চলছে আক্রমণ ও পালটা আক্রমণ। দু'জনেরই বিস্তর অভিযোগ আছে দু'জনের বিরুদ্ধে। একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমার ঐকান্তিক কামনা তাদের মধ্যে মিলমিশ হোক। দু'জনকেই সে কথা বলেছি। তবে লাভ হয়নি। লড়াই জারি আছে।

আমি বলি কি, মানুষের জীবন, বিশেষ করে যুগলজীবনটা কিন্তু একটা কম্প্রোমাইজ। বয়স বাড়তে থাকলে জৈবিক আকর্ষণ কমতে থাকে। আর তখন প্রয়োজন হয় আরো বেশি করে সমঝোতার। দরকার পড়ে আরো বেশি করে ছাড় দেয়ার। খোঁচাখুঁচি, ব্যক্তিত্বের সংঘাত কিন্তু বিদ্বেষ বাড়ায়, দূরত্ব বাড়ায় বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেয়। এই বিয়োগান্তক ঘটনায় সবচে' বড় ভিক্টিম হয় প্রিয় সন্তানেরা। আমাদের সামাজিক বাস্তবতা এবং অসংখ্য নজির কিন্তু সেই অভিজ্ঞতাই তুলে ধরে। 

তাই আমি আমার স্নেহভাজন এই যুগলকে খুব আন্তরিক মিনতি জানিয়ে বলছি, এখনো ঝুলে থাকা সম্পর্কটাকে বিচ্ছিন্নতার পথে ঠেলে দিওনা তোমরা। খোঁচাখুঁচি, স্ট্যাটাস যুদ্ধ, বিতর্ক, দোষারোপ ও আমিত্ব জাহির করা থামাও দু'জনেই প্লিজ। কারো কোনো অসৎ মতলব না থাকলে বা অমঙ্গল কামনা না করলে তোমাদের এই দ্বন্দ্ব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কারুর ভালো লাগার কথা নয়। আমিও এ জেদাজেদি দেখে খুব বেদনাহত ও আতঙ্কিত বোধ করি। আমিত্ব ও জেদের পরিণাম ও পরিণতি ভালো নয় কখনো। উস্কে দেয়ার ও বিভেদ বাড়াবার লোকের অন্ত নাই। কিন্তু বিভাজন থেকে উদ্ভূত বেদনা, সমস্যা ও যন্ত্রণার অংশীদার হবার কেউ নেই।

মানুষ ভুল করে, পদস্খলনও ঘটে তবে সেটা নিয়ে ক্রমাগত না খুঁচিয়ে ভালোবাসা দিয়ে প্রিয় মানুষকে ফেরাতে হয়। শাসন বা বিধিনিষেধের রজ্জুতে নয় প্রীতিডোরে বেঁধে রাখতে হয় প্রিয়জনকে। 'তোমার চেয়ে আমি ভালো' - এটা প্রমানের চেষ্টা মানেই হচ্ছে পার্টনারকে হেয় করা, তুচ্ছ করা। তারচে' বলা উচিত আমরা কেউ ছোটবড় নই - দু'জনেই সমান। পরস্পরের প্রতি যুক্তি ও তর্কের তির ছুঁড়ে পরাজিত করার চেষ্টা ছেড়ে  একজন আরেকজনকে জয় করো মহত্ত্বে ও ভালোবাসায়।

ভালোবাসার জন্য একটু নত হতে দোষ নেই। পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও মর্যাদাবোধ থাকলে নিজেকে একটু নুইয়ে ভালোবাসার স্বার্থে সমঝোতায় পৌঁছা কঠিন হয়না।

দীর্ঘজীবনের অভিজ্ঞতার সার-সংকলন করে তোমাদের বলছি, ফেসবুকের ঝগড়ায় দাম্পত্যবিরোধের নিষ্পত্তি হবেনা বরং বিদ্বেষ বাড়বে। আর কমবে উভয়ের সম্মান ও মর্যাদা। লজ্জিত হবে স্বজনেরা, বিশেষ করে সন্তানেরা। তারা কষ্ট পাবে। আর জেদ প্রশমিত হলে তোমরা নিজেরাও বেদনাবিদ্ধ হবে। তবে তখন হয়তো ফেরার পথ ফুরিয়ে যাবে।

এরকম সমস্যায় কেউ মধ্যস্ততা বা সাহায্যও করতে পারেনা। তাই, তোমরা দু'জনেই বসো বদ্ধ ঘরে। আত্মম্ভরিতা ও অহমিকা নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে না থেকে দু'জনেই দু'জনের দিকে এক-পা এগোও। কাউকে দরকার নেই। ঝগড়া করো, ঝড় উঠুক, বজ্র গর্জাক, বিজলি চমকাক। তারপর ত্রুটি-বিচ্যুতি, দুঃখ-বেদনা, অভিযোগ-অভিমান সব বর্ষণ হয়ে ঝরে যাক। দু'জনেই দু'জনকে ক্ষমা করে, ভালোবেসে জড়িয়ে নাও, আবার একত্র হও, মিলেমিশে জীবনকে প্রবাহিত করো অনিবার্যতার দিকে। এ আমার আহ্বান, আকুতি ও চাওয়া তোমাদের কাছে। তোমরা ভালো থেকো। তোমাদের সন্তানেরা থাকে যেন দুধে-ভাতে। ঘৃণা-বিদ্বেষ নিপাত যাক। ভালোবাসার জয় হোক। কল্যাণ হোক তোমাদের।

লেখক, মারুফ কামাল খান
সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।