ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আলোচিত মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্ট কাণ্ডের এক বছর আজ ৩ এপ্রিল। সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে তাণ্ডবের পর নারায়ণগঞ্জে ১৬টি নাশকতার মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে সোনারগাঁ থানায় ৮টি, সিদ্ধিরগঞ্জে ৭টি ও রূপগঞ্জে একটিসহ মোট ১৬টি মামলা দায়ের হয়। এরপর কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার করা ধর্ষণ মামলার বিচার কাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। চলছে স্বাক্ষ্যগ্রহণ। তবে নাশকতার ১৬টি মামলার তদন্তকাজ এখনও শেষ করতে পারেনি পুলিশ। এসব মামলায় এখনও চার্জশিট দাখিল না করায় শুরু হয়নি বিচার কাজ।
জানা গেছে, মোদীবিরোধী আন্দোলনের নামে ২০২১ সালের ২৮ মার্চ রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে বেপরোয়া তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ওইদিন হেফাজতের হরতালে নারায়ণগঞ্জ কাঁচপুর, সাইনবোর্ড ও রূপগঞ্জে ব্যাপক নাশকতা করে হেফাজত নেতাকর্মীরা। ঢাকাণ্ডচট্টগ্রাম ও ঢাকাণ্ডসিলেট মহাসড়কের একাধিক স্পটে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ, যানবাহনে ভাঙচুর, সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এরপর ৩ এপ্রিল মামুনুল হকের ধর্ষণ কাণ্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ওই বছরের ৩ এপ্রিল ‘বিকাল ৫টায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নাম্বার কক্ষে মামুনুল হককে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাসহ অবরুদ্ধ করে রাখে উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ স্থানীয় কয়েকজন। সন্ধ্যা ৭টায় মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে খবর পেয়ে স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রয়েল রিসোর্ট ভাঙচুর করে নারীসহ মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুর, মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ অফিস, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। স্থানীয় এক সাংবাদিককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ফেইসবুক লাইভে এসে নির্যাতনের মুখে মামুনুল হকের কাছে ক্ষমা চাওয়াতে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটে। ২৮ মার্চ হরতালে নাশকতা এবং ৩ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে রিসোর্টে ধর্ষণ ও নাশকতার ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় আটটি, সিদ্ধিরগঞ্জে সাতটি ও রূপগঞ্জে একটিসহ মোট ১৬টি মামলা করা হয়েছিল। এসব মামলায় বাদী হয়েছে পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিক, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পরিবহন মালিকরা। ১৬ মামলার বেশ কয়েকটিতে মামুনুল হককে প্রধান আসামি করে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, হেফাজতের আরও কয়েকশ’ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অন্তত ১৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এই ছয়টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় প্রধান আসামি মামুনুল হক।
মাওলানা মামুনুল হককে গত বছরের ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় করা ধর্ষণ ও সহিংসতার তিনটি এবং সিদ্ধিগঞ্জ থানায় করা নাশকতার তিনটিসহ ছয়টি মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত বছরের ৩০ এপ্রিল বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় মামলা করেন কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। গত ১০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগে মামুনুল হকই একমাত্র আসামি। ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলায় বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেওয়া হয়। ২৪ নভেম্বর প্রথম দফায় মামুনুল হকের উপস্থিতিতে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার সাক্ষ্য নেন আদালত। ১৩ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় মামুনুলের বিরুদ্ধে রয়েল রিসোর্টের সুপারভাইজার আব্দুল আজিজ, রিসিপশন কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম অনিক ও আনসার গার্ড রতন বড়াল সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, রিসোর্টের রিশিপশন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ও আনসার গার্ড ইসমাঈল আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।