ফাইল ছবি
চৈত্র মাসের শেষ দিন আজ শনিবার। বাংলা মাসের সবশেষ এই দিনটিকে চৈত্র সংক্রান্তি বলা হয়। আগামীকাল রবিবার পহেলা বৈশাখ, নতুন বাংলা বর্ষ-১৪৩১। আবহমান বাংলার চিরায়িত বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে এই চৈত্র সংক্রান্তি।
বাংলার সমাপনী মাস চৈত্রের এ শেষ দিনটি সনাতন বাঙালির লৌকিক আচারের ‘চৈত্রসংক্রান্তি’। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় বাংলা মাসের শেষ দিনে শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস ক্রিয়াকর্মে দিবানিশি যাপন করেন। মূলত স্বামী, সংসার, কৃষি, ব্যবসার মঙ্গল কামনায় লোকাচারে বিশ্বাসী নারী ব্রত পালন করেন। আচার অনুযায়ী এ দিনে বিদায় উৎসব পালন করে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। দোকানপাট ধুয়ে-মুছে বিগত বছরের যত সব জঞ্জাল, অশুচিতাকে দূর করতে চায়। কারণ রাত পেরোলেই খোলা হবে ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশের নতুন খাতা। সে উৎসবের চিরচেনা নাম ‘হালখাতা’। ঐ উৎসবে পরিচ্ছন্ন থাকে বিপণী প্রতিষ্ঠান, ধূপের সুগন্ধি ভারী করে রাখে ঘরের পরিবেশ।
রেওয়াজ অনুযায়ী এই দিনটিই সারা বছরের খরিদ্দারদের কাছে বকেয়া টাকা তোলার শুভদিন ভাবা হয়। চৈত্রসংক্রান্তির সবচেয়ে বড় আয়োজন চড়ক পূজা। চৈত্র মাস জুড়ে সন্ন্যাসীরা উপবাস, ভিক্ষান্নভোজন প্রভৃতি নিয়ম পালন করেন। সংক্রান্তির দিন তারা শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে ঝোলে। আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটে। শারীরিক কসরত দেখতে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ এসে জড়ো হয় চড়কমেলা-গাজনের মেলায়। মেলার সঙ্গে বিভিন্ন হিন্দু পৌরাণিক ও লৌকিক দেবতার নাম সম্পৃক্ত। যেমন—শিবের গাজন, ধর্মের গাজন, নীলের গাজন ইত্যাদি। তবে চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপনে এখন নতুন নতুন উপাদান অনুষঙ্গ যুক্ত হচ্ছে।
এদিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এ দিনে পালন করে বৈসাবি উৎসব। নানা আয়োজনে চৈত্রসংক্রান্তির পার্বণ আবার ঠিক একই সঙ্গে দুয়ারে কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। রাত শেষ হলেই নতুন দিন, তবে এটা শুধু নতুন দিনই নয়, নতুন বছরও বটে। নতুন বর্ষ। বৈশাখকে বরণ করতে সবখানেই এখন চলছে সাজসাজ রব।
লোক কথা অনুযায়ী, বাংলা পঞ্জিকার চৈত্র মাসের নামকরণ করা হয়েছিল তিক্রা নক্ষত্র হতে। পুরাণে আছে, সাতাশটি নক্ষত্রের নামে দক্ষ রাজ সুন্দরী কন্যাদের নামকরণ করেছিলেন। তার দুই কন্যার নাম যথাক্রমে চিত্রা ও বিশাখা। এক মাস ব্যবধানে জন্ম বলে এই দুই কন্যার নাম থেকে জন্ম নিল বাংলা দুই মাস; যথাক্রমে চৈত্র ও বৈশাখ। চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরু। সনাতন বাঙালির সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব পালিত হয় এই দুই দিনে।