ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের লঙ্কাকাণ্ডের ১১ বছর পরও সেই ঘটনা ভুলতে পারেনি সেদিনের অনেকেই।
২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকাতে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ ও রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিবর্ষণের পরদিন ৬ মে উত্তপ্ত ছিল রাজধানীর পাশের নারায়ণগঞ্জ জেলা। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে ১৭টি মামলা হয়েছিল।
এ ১৭টি মামলার মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জে ১১টি ও সোনারগাঁও থানায় ৬টি মামলা হয়। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ মামলার চার্জশীট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
১১ বছর আগে এদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে হেফাজতে ইসলাম, স্থানীয় লোকজন ও হেফাজত লেবাসে থাকা বিভিন্ন ক্যাডারদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টানা সাড়ে ৫ ঘণ্টার ব্যাপক সংঘর্ষে ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর দুই সদস্য ও পুলিশের ২ জন সদস্য ছিল।
তবে মামলায় বিএনপি ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের আসামি করা হলেও চার্জশিট থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের রহস্যজনক কারণে বাদ দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের রাখা হয়েছে। এখনো নিয়মিত এসব মামলা নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন।
সংঘর্ষের সময়ে রাস্তার উপর পড়ে থাকে লাশগুলো
২০১৩ সালের ৬ মে সকাল সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় মাদানী নগর মাদ্রাসায় অভিযান চালাতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে মাদ্রাসার ছাত্র, হেফাজতের কর্মী ও এলাকাবাসী। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলা বিরামহীন এ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় অনেকে। তাদের লাশ দীর্ঘক্ষণ পড়ে ছিল মহাসড়কের উপরেই। এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনেরা বলছেন, নিহত কেউ হেফাজতের কর্মী না। তারা নিছক নিরীহ। কাজের উদ্দেশ্যেই তারা বাসা থেকে বের হয়েছিল। কিন্তু বুলেট কেড়ে নিয়েছিল তাদের প্রাণ।
বিজিবির ২ জন ও পুলিশের ২ সদস্য নিহত
সংঘর্ষ চলাকালে এক পর্যায়ে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পেটাতে থাকে লোকজন। এতে পুলিশ ও বিজিবির অন্তত ৫০ সদস্য গুরুতর আহত হয়। তাদেরকে দ্রুত শহরের খানপুর ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, ১০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা নেওয়ার পথে ৩ জনের মৃত্যু ঘটে। নিহত বিজিবি সদস্য হলেন শাহ আলম (৪০), পুলিশের নায়েক ফিরোজ (৩৫) ও কনস্টেবল জাকারিয়া (২৮)। পরে মারা যান সিপাহী লাভলু।
৫ ঘণ্টা শুধু গুলির আওয়াজ
সকাল ৬টা হতে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সংঘর্ষের সময়ে এ তিন কিলোমিটার এলাকায় শুধু শোনা গেছে গুলির মুহুর্মুহু শব্দ। বিরামহীনভাবে শব্দে এলাকায় দেখা দেয় তীব্র আতঙ্ক। পুলিশ জানান, তারা কয়েক হাজার শর্টগানের রাবার বুলেট, চাইনিজ রাইফেলের গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া প্রচুর সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শোনা গেছে। সকাল সাড়ে ১১টায় পরিস্থিতি শান্ত হলেও টিয়ার সেলের গ্যাসের ঝাজ বিরাজ করছিল বিকেল পর্যন্ত। সকাল ৬টা হতে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকায় লোকজন চলাফেরা করতে পারেনি কাঁদানে গ্যাসের কারণে।
এদিকে সকাল ৬টা হতে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড হতে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে দুটি লেনের অন্তত ৩০টি গাড়িতে আগুন জলছিল। এর মধ্যে ছিল বিজিবি ও পুলিশের গাড়িও। বিভিন্ন যানবাহনের গাড়িও ছিল ভাংচুর অবস্থায়। সড়কের ৪০-৪৫টি স্থানে টায়ারে জ্বলছিল আগুন। সড়কের অনেক স্থানে বাঁশ, ইটপাটেকল ও রড ফেলে রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। সড়কের পাশে তখন মানুষের জটলা, হাতে ছিল বাঁশ আর লাঠিসোটা। অন্যদিকে সাজোয়া যানসহ শত শত র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যদের ছিল রণপ্রস্তুতি। ছুড়ছে একের পর এক বৃষ্টির মত গুলি। মহাসড়কের দুই পাশের ভবন আর বিভিন্ন স্থানে থাকা লোকজন গুলির শব্দে ছিল ভীত, আতঙ্কিত।