রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

পদ্মা-মেঘনায় বেপরোয়া নৌ ডাকাত বাবলা

প্রকাশিত: ২২:২১, ৩ জুলাই ২০২৪

পদ্মা-মেঘনায় বেপরোয়া নৌ ডাকাত বাবলা

বাবলা

মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলার সীমান্তবর্তী পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনায় নৌ ডাকাত বাবলা গ্রুপ আবারও বিভিন্ন নৌযানে ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালাচ্ছে। ফলে পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনা এখন নৌযান চালক-শ্রমিকদের আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। 

জানা যায়, নৌ ডাকাত বাবলা গ্রুপের কাছে ভুক্তভোগীরা সর্বস্ব হারিয়ে নিজ গন্তব্যে চলে যাওয়ায় অনেক ঘটনাই সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার হিসেবেও নথিভুক্ত হচ্ছে না। এ সুযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা ৩৭ মামলার আসামি নৌ ডাকাত বাবলা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে আবারও ডাকাতি শুরু করেছে, হয়ে উঠেছে বেপোরোয়া। ফলে চাঁদপুরের মতলবের কাঁচিকাটা ইউনিয়ন ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বাংলাবাজার ও আধারা ইউনিয়নের মেঘনা তীরবর্তী গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, মুন্সীগঞ্জ সদরের বাংলাবাজার ইউনিয়নের আশুলিরচর ও পশ্চিমকান্দি গ্রামে স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিয়ে বাবলা ও তাঁর সহযোগীরা মেঘনা ও পদ্মা নদীতে ডাকাতি করছে। নৌপথে সংঘটিত অপরাধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও নৌ ডাকাত গ্রুপের সদস্যরা দ্রুতগামী ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বা স্পিডবোট দিয়ে পালিয়ে যায়। মেঘনা নদীতে মতলবের মহনপুর, গজারিয়া থানা ও মুন্সীগঞ্জ সদর থানাধীন চর আব্দুল্লাপুর নৌ ফাঁড়ির পুলিশ টহল দিলেও অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে দ্রুতগতির স্পিডবোট ব্যবহার করে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ায় পুলিশ নৌ ডাকাতদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হচ্ছে। 

পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনার এক পাশে মতলব, মহনপুর ও চাঁদপুর এলাকা এবং অপর পাশে মুন্সীগঞ্জের বাংলাবাজার, বকচর, কালিরচর ও চর আব্দুল্লাহ গ্রাম। এলাকাজুড়ে বাবলা বাহিনী নদীতে চলাচলরত বালুবাহী বাল্কহেড, তেলবাহী জাহাজ, যাত্রীবাহী লঞ্চ, স্টিমার ও নদীতে মাছ ধরার জেলেদের ট্রলারে হামলা চালিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করে আসছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে গত ২৭ মার্চ বিকেলে মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার বাংলাবাজার কাজিয়ার চরে পদ্মার শাখা নদীতে বাবলা ডাকাতের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ডাকাত দল টাকা না পেয়ে ড্রেজার, ভেকু, ট্রলারসহ শ্রমিকদের বসতঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাদের হামলায় ড্রেজারে থাকা দুই শ্রমিক আহত হন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় ২২ ডাকাতের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ২৮ মার্চ সকালে চাঁদপুর এলাকা থেকে এজাহারভুক্ত তিন ডাকাত শিপন খালাসি, জামান খালাসি ও মামুন খলাসিকে গ্রেপ্তার করে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। কিন্তু দলনেতা বাবলা ওরফে উজ্জ্বল খালাসিসহ অপর আসামিরা এখনও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, নৌ ডাকাত বাবলার নামে চাঁদপুর থানায় ৮টি, মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় ২২টি, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৪টি ও শরীয়তপুর জেলায় তিনটি মামলা রয়েছে। নৌপথে সংঘটিত অপরাধের খবর পেয়ে ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালালেও জেলার সীমানা জটিলতার কারণে মাঝপথেই থেমে যায় গ্রেপ্তার অভিযান। গজারিয়া ও মুন্সীগঞ্জ থানার নৌ পুলিশ চাঁদপুর জেলার মতলব থানার মহনপুর সীমানায় প্রবেশ করে না। আবার মতলব থানার মহনপুর নৌ পুলিশ মুন্সীগঞ্জ জেলার সীমানা অতিক্রম করে না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নৌ ডাকাত বাবলা গ্রুপ পদ্মা ও মেঘনা নদীতে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে নদীর তীরসংলগ্ন কালিরচর, চর আব্দুল্লাহ, বকচর, নাসিরাচরসহ আশপাশ গ্রামের শত শত গ্রামবাসী এই নৌ ডাকাতদের প্রতিরোধে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ আশা করছে।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ নৌ ডাকাত বাবলাসহ সঙ্গীয় ডাকাতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় গ্রেপ্তারে বিলম্ব হচ্ছে।