রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ময়লার ভাগাড়ে অতিষ্ঠ মহাসড়কের যাত্রীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১৪ জুলাই ২০২৪

ময়লার ভাগাড়ে অতিষ্ঠ মহাসড়কের যাত্রীরা

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) এর ১ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি, হাসপাতাল ক্লিনিক ও কল-কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল, মুক্তিনগর, মাদানীনগর, মৌচাক ও পাইনাদি এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে। এতে সড়কের পাশে সৃষ্টি হচ্ছে ময়লার ভাগাড়। অন্যদিকে পাইনাদি দশতলা এলাকায় জনবহুল স্থানে ফুটপাত দখল করে দিনভর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে আবর্জনা ভর্তি ভ্যানগাড়ি। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী ও আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন অধিক ঝুঁকিতে। এছাড়াও ফুটপাত দখল, আবর্জনা ভর্তি ভ্যানগাড়ি থাকায় পথচারীদের হাঁটতে হয় ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের মূল অংশে নেমে। এতে মহাসড়কের ঐ অংশে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট এবং প্রায় সময়ই ঘটছে বিভিন্ন দুর্ঘটনা।

এদিকে নাসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনিয়মে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে নাসিক মেয়র বরাবর আবেদন করলেও এর কেনো প্রতিকার পাচ্ছে না তারা। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি বাসা থেকে মাসিক ১৫০ টাকা করে আদায় করছেন বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজে নিয়োজিত লোকজন। এরপরও তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে। নিয়মিত সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স পরিশোধের পরও বর্জ্য নিষ্কাশনের নামে ঐ দুই ওয়ার্ড থেকে গড়ে ১৬ হাজার পরিবার থেকে অতিরিক্ত ২৩ লাখ টাকার বেশি আদায় হলেও এর কোনা সুফল পাচ্ছে না ওয়ার্ডবাসীরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল মোড় পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকার কয়েকটি স্থানেই তৈরি হয়েছে বর্জ্যের ভাগাড়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, হাসপাতাল ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে। মাদানীনগর, মুক্তিনগর ও মৌচাক এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল ময়লার ভাগাড়। অনেকস্থানে ময়লা ফেলে পানি নিষ্কাশনের খালও ভরাট করা হয়েছে। এতে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হচ্ছে ডিএনডি অধ্যুষিত এলাকায়। মহাসড়কের পাশে নিয়মিত বর্জ্যে ফেলার কারণে আশপাশের এলাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে। বর্জ্যের উত্কট গন্ধে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিশেষ করে, পাইনাদি দশতলা এলাকায় জনবহুল স্থানে ফুটপাত দখল করে দিনভর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে আবর্জনা ভর্তি ভ্যানগাড়ি। এর সঙ্গেই ঘেঁষে রয়েছে পদসেতু (ফুটওভার ব্রিজ)। এখান দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ পারাপার হচ্ছে। আর পারাপারের সময় সবাইকে নাকে কাপড় চেপে পার হতে দেখা যায়।

স্থাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বর্জ্যে অনেক ‘ডাস্ট পার্টিকল’ রয়েছে, যা বাতাসে উড়ে। আমরা আবার তা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করি। ফলে আমাদের ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে, নানা ধরনের রোগবালাই বাড়ছে। আমাদের ফুসফুস একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ‘ডাস্ট পার্টিকল’ গ্রহণ করতে পারে। এর চেয়ে বেশি হলেই আমরা রোগে আক্রান্ত হই, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ও ফুসফুস ক্যানসারের। কাজেই এভাবে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা বা বর্জ্য ফেলে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মানিক বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রাহকরা বর্জ্য ভর্তি ভ্যানগাড়িগুলো দশতলা এলাকায় মহাসড়কের পাশে দিনভর ফেলে রাখা হয়। এসব বর্জ্যের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ময়লা নিয়ে আরাজকতা বা কারসাজি তো রয়েছেই। প্রতি পরিবার থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় ও মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ভর্তি ভ্যান গাড়ি দিনের পর দিন রাখার বিষয়ে নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিক ঠিকাদার হাসানের দুটি মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে, নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ আনোয়ার হোসেন বলেন, ময়লা রাখার কোনো স্থায়ী জায়গায় না থাকায় সিটি করপোরেশনের নির্দেশেই অস্থায়ীভাবে মহাসড়কের পাশে দিনভর ময়লার গাড়ি রাখা হয়। রাতে বড় ট্রাকে তুলে নিয়ে যায়। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা বন্ধ বা এবিষয়ে তাদের কিছু করণীয় নেই। বিষয়টি সিটি করপোরেশন ও বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের আওতাধীন। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে রাখা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা কোনোভাবেই এটা বন্ধ করতে পারছি না। এ কাজে আমরা অনেকটাই ব্যর্থ। ময়লা না ফেলতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলরদের একাধিক বার বলা হয়েছে। বিভিন্নভাবে অবগতও করা হয়েছে। এবিষয়ে কোনো সুরাহা হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমি এ বিষয়টি নিয়ে খুব শিগিগরই নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত্ আইভীর  সঙ্গে দেখা করব। এ নিয়ে আলোচনা করব।