রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:৫৬, ২৫ জুলাই ২০২৪

ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত

নারায়ণগঞ্জে

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জে। গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবন, পুলিশের স্থাপনা, যানবাহনসহ বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতুর পশ্চিম পাশ থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। বর্তমানে সেনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও যান চলাচল নেই বললেই চলে। জরুরি প্রয়োজনে বের হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তল্লাশির পর গন্তব্যে যেতে পারছেন সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, গত শুক্রবার ও শনিবার দফায় দফায় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, জালকুড়ি এলাকায় যুব উন্নয়ন কার্যালয়, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অফিস, ফতুল্লার শিবু মার্কেটসংলগ্ন বেসরকারি যাত্রীবাহী বাস শীতলের ডিপো, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের ডাচ-বাংলা ব্যাংক শাখা ও হাইওয়ে পুলিশের অস্থায়ী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়

এবং দ্বিতীয় দফায় গত শুক্রবার বিকালে জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে সরবরাহের অপেক্ষায় থাকা প্রায় সাড়ে সাত হাজার পাসপোর্ট পুড়ে যায়। এ ছাড়া কয়েক হাজার নতুন আবেদনের কাগজ ও কম্পিউটারসহ নানা সরঞ্জাম পুড়ে যায়।

পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলতে পারছি না। এ ঘটনায় ঢাকা কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। এ ঘটনায় ফতুল্লা থানায় নাশকতা আইনে মামলা করা হয়েছে। একই দিন অগ্নিসংযোগ করা হয় যুব উন্নয়ন কার্যালয়েও। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটির মূল ফটকের ভেতরে অগ্নিসংযোগের ক্ষতচিহ্ন, জানালার কাঁচ ভাঙা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূল ভবনও।

গত শনিবার বিকালে শিমরাইল এলাকায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও হাইওয়ে পুলিশের অস্থায়ী কার্যালয়ের ভবনটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভবনটির প্রথম তলায় গাড়ির টায়ার, বিদ্যুতের কেবল, রং ও সাইকেলের দোকান ছিল। দ্বিতীয় তলায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও তিন তলায় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। আর পঞ্চম তলায় হাইওয়ে পুলিশের অস্থায়ী কার্যালয়। দুর্বৃত্তরা ভবনটির নিচতলার দোকান, দ্বিতীয় তলায় থাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও তৃতীয় তলায় চাইনিজ রেস্টুরেন্টে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ব্যাংকের ভেতরে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কাজ করা তিন শ্রমিক নিহত এবং দুই নিরাপত্তারক্ষীসহ ১১ শ্রমিক আহত হন। গত সোমবার সকালে ব্যাংকের পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ থেকে তিন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন সেলিম প্রধান, আব্দুস সালাম ও সোহেল।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হলে পুলিশের একটি ভ্যানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ভবনেও হামলা হয়। একই দিন বিকালে সাইনবোর্ড এলাকায় পিবিআইয়ের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে কার্যালয়টির ব্যাপক ক্ষতি হয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবনে হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া শহরের দুই নম্বর গেটে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের ডিসি মাহমুদুল হক বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা জেলার সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করেনি। এগুলো সরকারবিরোধীদের কাজ। প্রতিটি ঘটনার জন্য আলাদা আলাদা মামলা করা হবে। দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।