ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে দেবীদুর্গার বিদায় বেলায় বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপে মণ্ডপে দুর্গা মাকে সিঁদুরে রাঙ্গিয়ে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী এখন দেবীদুর্গাকে বিসর্জন দেওয়ার পালা। বিজয়াদশীর তিথিতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর সময় সন্নিকটে। শহরের বিভিন্ন মন্দিরের চিত্র ছিল আনন্দময় ও উৎসব মুখর।
রোববার (১৩ অক্টোবর) শহরের বেশ কয়েকটি এলাকার পূজামণ্ডপে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
গত ৯ অক্টোবর ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসনের মাধ্যমে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে পরবর্তী চার দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ আপামর বাঙালি মেতে উঠে দুর্গোৎসবে। এবার দেবীর আগমন হয়েছে দোলায় (পালকি) এবং গমন হবে ঘোটকে (ঘোড়ায়)। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রত্যাশা ছিল দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির। এখন ঢাক-ঢোল, শঙ্খ ধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভক্তরা।
শেষ সময় মন্দিরে মন্দিরে ঢাকের তালে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠে সব বয়সের বিবাহিত নারীরা। তাদের একে অপরকে রং এ রাঙ্গিয়ে আনন্দ উৎসব করে। আজকের দিনটিতে মা দুর্গাকে সিঁদুর দিয়ে তারপর নিজেরা একে অপরকে সিঁদুর দেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা। এটি হিন্দু নারীরা দেবী দুর্গার আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকেই শহরের পূজামণ্ডপগুলোতে বাজছে বিদায়ের সুর। সকাল থেকেই ভক্তরা দেবী দুর্গার দর্শন পেতে ছুটছেন মণ্ডপগুলোতে। শেষ বেলায় দেবী দুর্গার আরাধনায় ব্যস্ত ভক্তরা। বিদায় মুহূর্তে মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা মেতেছে সিঁদুর খেলায়। ভক্তরা একে অপরের কপালে সিঁদুর দিচ্ছেন। গালে গালে কেটে দেন সিঁদুরের আঁচড়। সব মন্দিরের চিত্র ছিল আনন্দময় ও উৎসবমুখর। মণ্ডপে মণ্ডপে যাচ্ছেন আর মনের বাসনা পূরণে মায়ের আশীর্বাদ কামনা করছেন তারা।
এর আগে সকালে নির্ধারিত সময়ে উলু ধ্বনি, ঢাকের বাদন, কাশি, ঘণ্টা ও শঙ্খ বাজানো হয়। এরপর যথা নিয়মে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী দুর্গার পূজা। আর বিভিন্ন ভোগ্য সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপে রাখা দেবী দুর্গার চরণে অঞ্জলি দেন ভক্ত সাধারণ। বিজয়া দশমীতে পূজামণ্ডপগুলোতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি সবার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কানায় কানায় ভরে যায় মণ্ডপগুলো।
শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার আগে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রকাশের এই অনুশীলন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংস্কৃতির এক অনন্য দিক। এটি একটি সম্পর্কের সংযোগ তৈরি করে এবং বিদায়ের সময় আবেগকে আরও গভীর করে তোলে।