সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

|

পৌষ ১৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী নিহতে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:৩৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী নিহতে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা

প্রতীকী ছবি

নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগে প্রকাশ্যে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় পুরো জেলাবাসীকে শঙ্কিত করে তুলেছে। জেলাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাকে এজন্য দুষছেন তারা। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তাতে জোরালো ব্যবস্থা না নিলে জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশংকা করছেন তারা। 

জানা যায়, শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ঢামেকে রাত সোয়া ১০টায়  নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে কলেজ শিক্ষার্থী সীমান্ত (২০)। রোববার তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সীমান্ত রাজধানীর একটি বেসরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ভোর ছয়টার দিকে কলেজের উদ্দ্যেশ্যে যাওয়ার সময় দেওভোগের মিন্নত আলী মাজারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সীমান্ত শহরের দেওভোগ পাক্কা রোড এলাকার বাসিন্দা হাজী আলমের ছেলে।

হাজী আলম জানান, সেদিন সকালে কলেজে যাবার সময় মিন্নত আলী মাজারের সামনে ছিনতাইকারীরা পথরোধ করে সীমান্তর ব্যাগ, মোবাইল টানাটানি করে। এসময় তাদের বাধা দিতে গেলে তারা মাথা, পেটে ও পায়ে কুপিয়ে তাকে আহত করে। পরে স্থানীয়রা ও পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।  

এদিকে নিহতের লাশ দাফনের আগে তার বাড়িতে পুলিশসহ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পর্যায়ের অভিভাবকরা উপস্থিত হন। তারা নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা অবনতিতে শংকা প্রকাশ করেছেন। পুলিশের কাছে দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি করেন তারা। ছিনতাইয়ের ঘটনার পর এত সময় অতিবাহিত হলেও আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় উদ্বেগ আরো বাড়ছে বলে জানান তারা।

অভিভাবকরা বলেন, আমরা তো এখন আমাদের সন্তানদের শিক্ষাঙ্গনে প্রেরণের পর শংকায় থাকবো তারা সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারবে কিনা তা ভেবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে আমাদের এমনটা ভাবতে হচ্ছে। দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং অপরাধীদের শনাক্ত করতে হবে। 

এদিকে নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা সৃজয় সাহা এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবী জানান।

এসময় তারা বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর সকালে দেওভোগ পাক্কা রোড নিবাসী শিক্ষার্থী সীমান্ত বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়ার পথে মর্গ্যান স্কুল সংলগ্ন রোডে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। ২দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সীমান্ত গতকাল ১৪ ডিসেম্বর রাত ১০টায় মৃত্যুবরণ করে।

তারা জানান, এই ঘটনা নারায়ণগঞ্জ শহরে নতুন নয়। হরহামেশাই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। সকাল-রাতে ছিনতাইয়ের শিকার হতে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে। বহু শিক্ষার্থীকে সকালে তাদের পড়াশুনার জন্যে বাইরে যেতে হয় এবং রাতে ফিরতে হয়৷ সীমান্তের ক্ষেত্রেও এমনটিই ছিলো। ক্লাশ করতে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের সীমান্ত ছিনতাইয়ের শিকার হয় এবং ছুরিকাহত হয়ে মারা যায়। কয়েক বছর আগে ২০১৭ সালে একইভাবে ছিনতাইয়ের কবলে পরে নিহত হন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ফতুল্লা থানার সংগঠক তরুণ সাংবাদিক শাহরিয়াজ শুভ্র। এতো বছরেও শহরের উন্নতি ঘটেনি বরং হয়েছে অবনতি।

শ্রমিক অঞ্চলগুলোতে শ্রমিকদের অর্থ ছিনিয়ে নেয়া, জখম হওয়া, রিক্সা-সিএনজিচালকের মৃত্যু এসব শহরের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এমনকি গত ৯ ডিসেম্বর, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে হামলার শিকার হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।

তারা বলেন, একসময় গডফাদারের এই শহর ছিলো সন্ত্রাসের আতুরঘর। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী এই সময়ে জেলা গডফাদারমুক্ত হয়েছে তবে এসকল অপরাধের শেল্টার হাউজ কারা হচ্ছে তা ই আজ জনতার প্রশ্ন। আমরা নাগরিক নিরাপত্তা চাই, স্বস্তিতে-নির্ভয়ে নিজ জেলায় বসবাস করতে চাই।

আমরা সীমান্ত হত্যার বিচারের দাবি জানাই। পাশাপাশি চাই শহরের নিরাপত্তা। এই ছিনতাইয়ের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন প্রশাসনিক কঠোর অবস্থান। ছিনতাই উপদ্রব রুখতে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। ছিনতাইয়ের স্পট চিহ্নিত করে সেখানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং ছিনতাইকারী-ডাকাত এদের রাজনৈতিক শেল্টারগুলো খুঁজে বের করে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিগত সকল ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আওতায় আনতে হবে।