বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

|

ফাল্গুন ২৭ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নিষিদ্ধ হলেও চলছে শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিষিদ্ধ হলেও চলছে শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার

ফাইল ছবি

আইনে নিষিদ্ধ  থাকলেও নারায়ণগঞ্জজুড়ে চলছে শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার। অনেকটা বাধ্য হয়েই সেই সব কোচিং সেন্টারে ভর্তি করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কোচিং না করলে নম্বর কম দেওয়া ও ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি কোনো কোনো স্কুলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার ঘটনাও ঘটছে।

এছাড়া শ্রেণিকক্ষে পরিপূর্ণ শিক্ষা পাঠদানে নিশ্চিত হতে পারছেন না অভিভাবকরা। যে কারণে বাধ্য হয়েই তারা সন্তানদের নিয়ে আসছেন একই শিক্ষকের কোচিং সেন্টারে। মাসের ব্যয়ের হিসাবে যা তৈরি করছে বাড়তি চাপ। অধিকাংশ কোচিং সেন্টারে ব্যাচে শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী পড়তে আসছে বেশি। বরাবরের মতো এবারও বছরের প্রথম মাস থেকেই শুরু হয়েছে এসব কোচিং। অনেক অতি উৎসাহী অভিভাবক তাদের সন্তানকে সকালে এক কোচিং এবং বিকালে আরেক কোচিংয়ে পাঠাচ্ছেন। অনেক অভিভাবক কোচিং ও বাসায় প্রাইভেট দুটিই চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে নীতিমালা ২০১২ সালে প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। হাইকোর্টের আদেশে ২০১৯ সালে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ঐ নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। তবে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারেন। ঐ শিক্ষার্থীদের নাম, রোল ও শ্রেণি সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানপ্রধানকে জানাতে হবে। এ নীতিমালা দেশের কোথাও মানা হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১৫ বছর ধরে এই ব্যাপারে চুপচাপ ছিল। নীতিমালা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর’ (মাউশি) দীর্ঘদিন ধরে বসে আছে ‘হাত গুটিয়ে’। ব্যবস্থা নিতে জনবলসংকটের কথা বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। ফলে এটি এখন ‘কাগুজে নীতিমালা’য় পরিণত হয়েছে। সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক শ্রেণির স্কুলশিক্ষক রমরমা কোচিং বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন।

কোচিং বাণিজ্য বন্ধে তদারকি করতে জেলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি করে আট সদস্যের কমিটি গঠনের কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে। বাস্তবে এসব কমিটির কার্যকারিতা দেখা যায় না। নীতিমালা অনুসারে এমপিওভুক্ত বা এমপিওবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত বা এমপিওবিহীন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতনভাতা স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন একধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তি হতে পারে। তবে বিগত এক যুগে একজন শিক্ষককেও কোচিং সেন্টার পরিচালনার দায়ে শাস্তির মুখে পড়তে দেখা যায়নি।

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষায় বড় সংস্কার দরকার। শিক্ষাকে ক্লাশমুখী করতে হবে। এক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্ট হলো শিক্ষকরা। তারা যাতে ক্লাশ রুমে ভালোভাবে পড়ান সেই ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সামাজিক সম্মান বাড়াতে হবে। যাতে মেধাবী তরুণরা শিক্ষকতা পেশায় উৎসাহিত হন।’

স্কুলে ভালো না পড়িয়ে কোচিং করানোর মানসিকতার জন্য শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কম থাকাকেই দায়ী করেছেন অনেক শিক্ষাবিদ। সম্প্রতি একাধিক জরিপ থেকে জানা যায়, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে। বিশেষ করে মেট্রোপলিটন, বিভাগীয় ও জেলা শহরে কোনো শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে না, তা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ার হার বাড়ছে। একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য থেকে জানা যায়, কোচিংয়ের কারণে বর্তমানে শিক্ষা ব্যয়ের সিংহভাগই রাষ্ট্রের পরিবর্তে পরিবারের ওপর বর্তাচ্ছে। দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৯ ভাগ ও সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত (এমপিওভুক্ত) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ ভাগই পরিবার নির্বাহ করে। এ ব্যয়ের সিংহভাগই যায় কোচিং-প্রাইভেটের পেছনে।