
সংগৃহীত
প্রাচ্যের ড্যান্ডি–খ্যাত শিল্প ও বাণিজ্যনগরী নারায়ণগঞ্জে আগে ইফতারে খেজুর, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, শরবত ও দেশীয় ফলের প্রচলন ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইফতারে নানা পদের খাবার যুক্ত হয়েছে। রোজায় অভিজাত রেস্তোরাঁসহ খাবার হোটেলগুলোতে নানা পদ ও স্বাদের ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। রেস্তোরাঁগুলোর সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে শতাধিক ধরনের ইফতারসামগ্রীর পসরা সাজিয়েছে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন বেলা দুইটার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা।
সারা দিন রোজা শেষে পরিবারের সঙ্গে ভিন্ন খাবারের স্বাদ নিতে রেস্তোরাঁগুলোতে ভিড় করছেন অনেকে। তবে ইফতারসামগ্রীর দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক ক্রেতা। এসব দামি খাবার কেনার আবার অনেকের সামর্থ্য নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুগন্ধ্যা প্লাস, আনন্দ রেস্তোরাঁ, মনির হোটেল, সুইট নেশন, গ্র্যান্ড হোটেল, লাভিস্তা, হোয়াইট হাউজ, আলম কেবিনসহ শহরের অভিজাত রেস্তোরাঁগুলোতে রোজার শুরু থেকে ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। দুপুরের পর থেকে ইফতার কেনার জন্য ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁতেই রয়েছে রেশমি জিলাপি, বোম্বাই জিলাপি, মাটন হালিম, পেশোয়ারি হালিম, আলুর চপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা বুট, ডিম চপ, ভেজিটেবল রোল, টানা পরোটা, চিকেন সাসলিক, হারিয়ালি কাবাব, চিকেন বল, মাস্টার্ড চিকেন, জালি চিকেন, কিমা পরোটা, চিকেন কাটলেট, হানি চিকেন, চিকেন স্টিপস, কেশর পেস্তা শরবত, মহব্বত-ই-শরবত, বাকলাভা, গোলাপজামন বেক ইয়োগাট, লাবাং, তন্দুরী চিকেন, দই, জর্দা, ফালুদা, ফিরনিসহ শতাধিক পদের ইফতারি।
শহরের মিশনপাড়া, গলাচিপা ও কলেজ রোড এলাকায় তিনটি শোরুমে সুইট নেশন মিষ্টান্নর পাশাপাশি ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানের এরিয়া ম্যানেজার মোবাশ্বর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খাবারের গুণগত মান ঠিক রেখে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছি। ৪৬ পদের ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছি।’ তাঁদের ইফতারির আইটেমের মধ্যে বেশি চলছে পেশোয়ারি হালিম, চিকেন জালি কাবাব।
ইফতারি কিনতে এসেছিলেন শহরের মিশনপাড়া এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী মেহেজাবিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন তো বাসায় তৈরি ইফতারি খাই। স্বাদের ভিন্নতার জন্য পরিবারের সবার জন্য রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতারি কিনতে এসেছি। তবে দাম একটু বেশি।’
শহরের চাষাঢ়া এলাকার বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বলেন, বাসায় হাতে বুট, চপ ও বেগুনি তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে ইফতারির ভিন্ন আইটেম যোগ করতে রেস্টুরেন্ট থেকে চিকেন কাবাব, পেশোয়ারি হালিম নেওয়া হয়েছে। রেস্টুরেন্টের ইফতারসামগ্রী খেতে অনেকে পছন্দ করেন।
এদিকে শহরের বিবি রোডের অভিজাত রেস্তোরাঁ সুগন্ধ্যা প্লাসে চিকেন লেগ পিছ, খাসির লেগ, খাসির রান, রাশিয়ান ফ্রাই, শাহি হালিম, শাহি টিক্কা, দই, পরোটা, সুলতান কাবাব, মাটন সাসলিকসহ ৭০-৮০ পদের ইফতারসামগ্রী বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মেরাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা ইফতারসামগ্রী তৈরি করছেন। তাঁদের ইফতারির সব পদ ভালো বিক্রি হচ্ছে।
শহরের চাষাঢ়া আর্দশ মিষ্টান্ন ভান্ডার ক্রেতাদের সামনেই গরম–গরম মোটা জিলাপি ভেজে বিক্রি করছে। সুস্বাদু হওয়ায় তাদের জিলাপির চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। আদর্শ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মলয় চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজায় আমাদের জিলাপির চাহিদা বেশি। গুণগুত মান ঠিক করে রোজায় প্রতি কেজি ২৫০ টাকায় বিক্রি করছি।’
নারায়ণগঞ্জে ইফতারের সংস্কৃতি প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, স্বাধীনতার আগে আমাদের এখানে ইফতারির পদ ছিল খোরমা, খেঁজুর, মুড়ি, বুট, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, লেবুর শরবত এবং সঙ্গে কিছু দেশীয় ফল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইফতারিও বদলে গেছে। মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি সবকিছু বদলে যায়। এখন ইফতারে বহু কিছু যুক্ত হয়েছে। একশ্রেণির মানুষ দেদারসে এসব কিনছেন, অধিকাংশই কেবল তাকিয়ে দেখছেন। কেনার সামর্থ্য তাঁদের নেই।’
সুত্র: প্রথম আলো