মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫

|

চৈত্র ১৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ঈদের পর শুরু ‘বহুল কাঙ্ক্ষিত’ কদমরসুল সেতুর কাজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ২৭ মার্চ ২০২৫

ঈদের পর শুরু ‘বহুল কাঙ্ক্ষিত’ কদমরসুল সেতুর কাজ

সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ‘বহুল কাঙ্ক্ষিত’ কদমরসুল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। নানা জটিলতা নিরসনের পর রোজার ঈদের এক মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্প নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ চুক্তি স্বাক্ষরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে কদমরসুল সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করতে আর কোনো বাধা থাকবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এলজিইডির নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুজ্জামান বলেন, নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন এ সেতুর কাজ শুরু করা যায়নি। সব জটিলতার অবসানের পর গতবছর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও নির্ধারণ করা হয়। বৃহস্পতিবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এ প্রকল্পের পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী হরিকিংকর মোহন্ত।

“ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়ে যাওয়ার পরই কাজ শুরু করা যাবে। আমরা মূলত বন্দর অংশ থেকে কাজ শুরু করব। ওই অংশে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়ে গেছে। আমরা ঈদের পর মাসখানেকের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারব”, যোগ করেন প্রকৌশলী আহসানুজ্জামান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন বলেন, “নগরবাসীর বহুল আকাঙ্ক্ষিত কদমরসুল সেতুটির জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেলেও নানা জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। এমনকি নকশাও বদলাতে হয়েছিল। তবে, সব জটিলতা থেকে মুক্ত হয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুততার সঙ্গে শুরু করা হবে। নগরবাসীর অপেক্ষার অবসান ঘটবে।”

নারায়ণগঞ্জের বুক চিরে বয়ে চলা শীতলক্ষ্যা নদী জেলার গুরুত্বপূর্ণ দুই উপজেলা সদর ও বন্দরকে আলাদা করেছে। দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াত সহজ করতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। নির্বাচন এলেই প্রার্থীরা শীতলক্ষ্যার উপর সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত দুইপাড়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সেতুটি আর নির্মিত হয়নি।

অন্তত দুই দশক আগে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে শীতলক্ষ্যার দুই পাড়ের মানুষের চলাচল সহজ করতে নবীগঞ্জ এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

২০২২ সালের ১০ অক্টোবর শীতলক্ষ্যার ওপর নির্মিত তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বন্দরের সেন্ট্রাল খেয়াঘাট থেকে মদনগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর দূরত্ব সড়ক পথে অন্তত তিন কিলোমিটার। সেতু পার হয়ে আবার সদরে মূল শহরে আসতে আসতে আরও তিন থেকে চার কিলোমিটার পথ পার হতে হয়।

সেতুটি সদর ও বন্দর উপজেলাকে সংযুক্ত করলেও শীতলক্ষ্যার দুই পাড়ের মানুষের নিত্যদিনের যাতায়াতে কোনো উপকারে আসেনি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।

২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের আগে ভোটারদের দুর্ভোগ দূর করতে শহরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন আইভী। ২০১৭ সালে শীতলক্ষ্যার উপরে ৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়কসহ ১ হাজার ৩৮৫ মিটার সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সিটি করপোরেশন। বন্দর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কদমরসুল দরগাহের নামে এ সেতুর নামকরণ করারও সিদ্ধান্ত হয়।

সেতুটি শহরের ৫ নম্বর গুদারাঘাট এলাকার সঙ্গে অপর প্রান্তে বন্দর উপজেলার একরামপুর এলাকার সংযোগ করবে। এ সেতু বন্দর ও সদরের দুই শহরের মধ্যে সংযোগ তৈরি করলে তা মাত্র দুই মিনিটের পথ হবে।

পরের বছর, ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর একনেক সভায় এ প্রকল্পের জন্য ৫৯০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বরাদ্দ পায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আপত্তির কারণে আটকে যায় প্রকল্প কাজ। এভাবে গত ছয় বছর পেরিয়ে যায়। এরই মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায় ২৮ শতাংশ। এমনকি প্রকল্পের নকশাও পরিবর্তন করতে হয়।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, কদমরসুল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রকল্প এলাকায় শীতলক্ষ্যার পশ্চিমপাড়ে রেলওয়ে ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জমি। আবার নদীর পূর্ব পাশে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ নিয়েও জটিলতা দেখা দেয়।

একইসঙ্গে বেসরকারি কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) লিমিটেডের মালিকানাধীন জমির একটি অংশও প্রকল্পের জন্য বাধা ছিল। আপত্তি ছিল স্থানীয় নৌযান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদেরও।

এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করতে না দেওয়ার পেছনে ‘ওসমান পরিবারের হাত আছে’ বলেও একাধিক সময়ে অভিযোগ তুলেছিলেন সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

যদিও গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে রেলওয়ে, কুমুদিনী ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জটিলতা কাটিয়ে উঠতে প্রকল্পের ব্যয় ২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকায়। পরে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে।

তবে সেতুটির নির্মাণকাজ দ্রুততার সাথে শেষ করার দাবি জানান স্থানীয়রা।