
আলোক প্রজ্বালন অনুষ্ঠান
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় জড়িত সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি নির্ভুল অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করার দাবি জানিয়েছেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, ওসমান পরিবারের সবাই বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার দায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বাহিনী এড়াতে পারে না।
নারায়ণগঞ্জ নগরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে রফিউর রাব্বি এই দাবি করেন। ত্বকী হত্যার ১৪৫ মাস উপলক্ষে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই আলোক প্রজ্বালন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রফিউর রাব্বি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘শেখ হাসিনা সাড়ে ১১ বছর ত্বকী হত্যার বিচারের সব কার্যক্রম বন্ধ করে রেখেছিলেন। বর্তমান সরকার আবার কাজ শুরু করলেও তাতে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয় নাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী তিন মাসের মধ্যে ত্বকী হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমানসহ সব ঘাতককে অন্তর্ভুক্ত করে একটি নির্ভুল অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করার দাবি জানাচ্ছি।’
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশের বিচারব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে রেখে গেছেন। তার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এখনো হয় নাই। শেখ হাসিনার সহযোগিতায় ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জে মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। সে মাফিয়াতন্ত্র এখনো বহাল রয়েছে। এখন তা বিএনপির দখলে।’
অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর, সিপিবির জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুর সুজন, বাসদের জেলা সংগঠক সেলিম মাহমুদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা সংগঠক শওকত আলী ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
সমাবেশে বক্তারা নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চল, বুলু, মিঠুসহ সব হত্যার বিচার দাবি করেন। সেই সঙ্গে সাংবাদিক সাগর-রুনি ও তনু হত্যার বিচার চান।
বক্তারা ত্বকীর লাশ উদ্ধারের সেই সময়ের ঘটনাবলি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাঁদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। অচিরেই র্যাব অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু এর তিন মাস পর শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলে বিচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সে অভিযোগপত্র আজও পেশ করা হয়নি।
ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।