শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

|

পৌষ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

না.গঞ্জের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, স্বাভাবিক ট্রেন্ড বলছে পুলিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৭:১০, ৭ মে ২০২৩

আপডেট: ১৭:১০, ৭ মে ২০২৩

না.গঞ্জের আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, স্বাভাবিক ট্রেন্ড বলছে পুলিশ

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ক্ষমতাসীন দলের নেতা চোখ উপড়ে স্বজনদের সামনেই খুন করেছে যুবদল নেতাকে আর আধিপত্য বিস্তারের জেরে ফতুল্লা ও বন্দরে পৃথক ঘটনায় প্রকাশ্যেই  কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে প্রতিপক্ষের ২জনকে। চলতি সপ্তাহে মাত্র ৪৮ঘন্টার ব্যবধানে ৩টি নৃশংস হত্যাকান্ড ছাড়াও গত মার্চ মাসের ৩১দিনে পুরো জেলায় খুনের ঘটনা ঘটেছে ৮টি। এছাড়া চলতি সপ্তাহে সংবাদ প্রকাশের জেরে রূপগঞ্জে বাংলা টিভির সাংবাদিক সোহেল কিরণকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে আহত করলেও পুলিশ ঐ ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি। এসব পরিসংখ্যানই বলছে নারায়ণগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। 

তবে আইন শৃঙ্খলার এই পরিস্থিতিকে অবনতি বলে মানতে নারাজ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন। জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার দাবী, এই জেলায় প্রায় ১ কোটি লোকের বসবাস এবং এই জেলায় মাসে ৭টি কিংবা ১০টি খুন হওয়া স্বাভাবিক। তবে বাস্তবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। 

তারা বলছেন, এমন কোন পাড়া মহল্লা নেই যেখানে কিশোর গ্যাং কিংবা মাদক ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে গ্রুপে গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছেনা। বিশেষ করে শহর ও শহরতলীতে রাতের আধার নামলে ছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক হয়ে গেছে।

নারায়ণগঞ্জে গত মার্চ মাসেই খুনের ঘটনা ঘটেছে ৮টি। গত ১০ মার্চ বন্দরের ধামগড় ইস্পাহানী এলাকা থেকে রোমান (২৪) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১২ মার্চ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার চর কাশিপুর এলাকায় ইজিবাইক ছিনিয়ে নিতে ইউসুফ (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত ১৪ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের ১ নং গঙ্গাপুর বাজার এলাকায় রুবেল (২৮) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন ফতুল্লার নরসিংহপুর এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. সুমন (২৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। 

গত ১৭ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের গজারিয়াপাড়া এলাকার একটি খেলার মাঠ থেকে রোজিনা আক্তার (৩৪) নামে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের বরগাঁও চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় আবুল কাশেম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১৮ মার্চ ফতুল্লার কাশিপুর এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহিন আলম (২২) নামের এক ইজিবাইক চালককে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে মাদক সেবীরা। গত ২২ মার্চ সিদ্ধিরগঞ্জের শ্মশান ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ২৬ মার্চ রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার হাটিপাড়া এলাকাস্থ কামাল হাজীর বাড়িতে পারিবারিক কলহের জেরে সুমা আক্তার রহিমা (২৩) নামে এক গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। গত ২৭ মার্চ রূপগঞ্জে পারিবারিক কলহের জের ধরে দেবর রফিকুল ইসলামের পিটুনিতে আহত গৃহবধু পারভীন আক্তার গত ৩ এপ্রিল মারা যান।  

এছাড়াও গত মাসের ২ এপ্রিল আড়াইহাজারে তুচ্ছ ঘটনায় কামাল নামে এক বৃদ্ধকে তারই স্বজনরা মারধর করলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গত ৪ এপ্রিল জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবকে অপহরণ করেন বাড়ীতে নিয়ে যান ঐ ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হাশমত আলী ও তার লোকজন। এ সময় তাকে বাঁচাতে তার বাবা-মা-ভাই ও স্বজনারা ছুটে এলেও তাদের সামনেই মাহাবুবকে সেখানে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও চোখ উপড়ে হত্যা করা হয়। গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার সময় বন্দরে পূর্ব শত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে মেরাজুল ইসলাম নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। ঘটনাটি এতটাই নৃশংস ছিল যে, মেরাজুলের মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঘাতকরা যাওয়ার সময় তার পেট কেটে নাড়ি-ভুড়ি বের করে দেয়। এসময় মেরাজুলের সাথে থাকা তার বন্ধু আল আমিনকেও কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। 

সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেওভোগ বাশমুলির এলাকায় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আফজাল (৪২) কে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ রাজু প্রধান বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। ঐ দিন সকাল নয়টার দিকে রাজু বাহিনীর প্রধান রাজু প্রধানসহ ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী তাকে রাস্তা থেকে তুলে হাসেমবাগ এলাকায় নিয়ে গিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে।

এবিষয়ে ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারায়নগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আইন শঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে বা গেছে। একের পর এক খুন আর অপরাধকর্ম ঘটছে এবং দৃশ্যপটই প্রমাণ করে যতটুকু কঠোর হওয়া কঠোরতা প্রদর্শন করা উচিত ছিল সেটুকু তারা করছেন না। এই অবস্থা চলতে থাকলে নারায়ণগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই নিন্মমুখী হয়ে উঠতে পারে যা খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে যাবে। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের বর্তমান প্রশাসনের অদক্ষতাই এই পরিস্থিতির মূল কারণ। পুলিশ ঘটনার পর আসামি ধরছে বলে জানালেও নেপথ্যের মূল নায়করা অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে। আমরা মনে করি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ হলো প্রশাসনে যোগ্য ব্যক্তিদের আসীন করতে হবে। এদিকে নারায়ণগঞ্জের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে, এমনটা মানতে নারাজ জেলা পুলিশ। 

নগরবাসীর এতসব উদ্বেগের বিষয়কে উড়িয়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এমন বলা যাবে না, তাছাড়া এমন তো না যে বেশী কিছু হয়ে গেছে। তাছাড়া খুনতো মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এসব ঘটনাকে খুন বলা যাবেনা কারণ বেশীর ভাগ ঘটনাই পূর্ব শত্রুতা, পারবিারিক বা জমিজমা নিয়ে বিরোধ থেকে ঘটছে। কোন সহিংসতা বা ধরে ধরে টার্গেট কিলিং হলে বলা যেত। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে আয়তনের দিকে থেকে প্রায় এক কোটি লোকের বসবাস। জনসংখ্যার দিক থেকে প্রতি মাসেই এখানে গড়ে ৮-১০টি হত্যা মামলা রুজু হয়।