সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের বাতাসে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী বাতাসের মান ছিল অস্বাস্থ্যকর। দুপুর ২টা নাগাদ নারায়ণগঞ্জ শহরে মানসূচক স্কোর ছিল ১৮৩। একই সময়ে ঢাকার বাতাসের মানসূচক স্কোর ছিল ১৬৩। অর্থাৎ রাজধানীর চাইতেও বেশি দূষিত হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের বাতাস।
বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। কয়েক ঘণ্টা পরপরই শহরগুলোর বাতাসের মান আপডেট করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
বায়ু দূষণের এই চিত্রে বলা হয় নারায়ণগঞ্জের বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। নারায়ণগঞ্জের বাতাসে যে পরিমাণ বস্তুকণা রয়েছে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চাইতে অন্তত ৫৬ গুণ বেশি।
মানদণ্ড অনুযায়ী, একিউআই ০-৩৩ হলে তা স্বাস্থ্যকর বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরপর ৫১ থেকে ১০০ হলে বাতাসকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে ধরা হয়। তবে ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা অস্বাস্থ্যকর বাতাস হিসেবে ধরা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুবই খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ৩০০ এর ওপরের বাতাসের মান হলে সেই বাতাসকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। মানদণ্ড অনুযায়ী সোমবারে নারায়ণগঞ্জের বাতাস অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত।
বাতাসের এমন দূষণে হতাশা প্রকাশ করে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে বাতাস দূষিত হওয়ার প্রধান কারণ নির্মাণ সংক্রান্ত দূষণ। রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলায় প্রচুর ধূলিকণা বাতাসে ছড়িয়ে পরে। নির্মাণকাজে নিয়োজিত থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো পানি ব্যবহার করে না। এই বিষয়ে তাদের বলার পরেও উদাসীন থাকে। তা ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে সব ধরনের কনস্ট্রাকশন কাজ বেশি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শীত মৌসুমে বায়ু দূষণের জন্য সবাই ইটভাটাকে দায়ী করে। কিন্তু ইটভাটা প্রধান দূষণের কারণ নয়। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, বিশেষ করে ফিটনেস বিহীন বাহনের ধোঁয়া অন্যতম কারণ। এ ছাড়া গাছ কম লাগানো, রাস্তার পাশের গাছ কেটে ফেলায় প্রচুর ধুলোবালি উড়ে। যা আমাদের বায়ু দূষণ বাড়িয়ে দেয়। রাস্তার পাশে গাছ ও ঘাস লাগানো হলে বাতাসে বালুর কণা ছড়িয়ে যাওয়া কমবে।’
সদ্য বিদায়ী জেলা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ব্রজ গোপাল রাজবংশী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে অন্যান্য জেলার তুলনায় গাছের সংখ্যা কম। এটা একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল জেলা সেটা সবাই জানে। আমরা বন বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম কী পরিমাণ গাছ আছে সেই বিষয়ে জরিপ করতে। সেটা আমি থাকাকালীন হয়নি। তবে এই জেলায় বায়ু দূষণ রোধে প্রচুর গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। আয়তনের দিক থেকে বিবেচনা করলেও যেমন গাছ কম, তেমনি মানুষের উপস্থিতি বিবেচনা করলে গাছের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য।’
গাছ লাগানোর বিষয়ে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মঈনুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের সিটি করপোরেশনের বাজেটে বৃক্ষ রোপণ ও সবুজায়নে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জকে সবুজায়ন করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে ছাদ বাগান করলে বাসিন্দাদের জন্য ১৫ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খালি জায়গায় গাছ লাগানো, ইকোপার্ক তৈরি করা হচ্ছে।’
দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকায় বাতাসে ধূলিকণা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে রোগী বেড়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মৌসুমে প্রচুর ঠান্ডা, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক রোগী বহির্বিভাগে সেবা নিচ্ছেন। সংখ্যাটা নির্দিষ্ট বলা না গেলেও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তা বলতে পারি। এই ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে বাঁচতে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা প্রয়োজন।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা