আলোচনা সভা
প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে জনসমর্থন ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং বিশ্ব হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস ২০২৪ পালন উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হলো- ‘রেজোলিউশনের দশ বছর: আমরা কতটা অগ্রগতি করেছি?’— এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যৌথভাবে আলোচনা সভাটি আয়োজন করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও আয়াত এডুকেশন।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুর ১২ টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সভাকক্ষে ‘মমতাময় নারায়ণগঞ্জ’ প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক এএইচএম কামরুজ্জামান।
আয়াত এডুকেশনের প্রকল্প পরিচালক লায়লা করিমের সভাপতিত্বে ও প্রকল্প সমন্বয়কারী সুমিত বণিকের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সচিব (উপ-সচিব) মোঃ নূর কুতুবুল আলম, এবং নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ এ এফ এম মুশিউর রহমান। এছাড়াও অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। সভায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ক বক্তব্য উপস্থাপন করেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। সভা শেষে মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে সম্মাননা স্মারক এবং প্রকল্পের ২৫জন স্বেচ্ছাসেবককে তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সনদপত্র প্রদান করা হয়।
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ, তরুণদের সাথে নিরাময় অযোগ্য রোগী ও তাদের পরিবারের জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ারের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং এই বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই ছিল এই সভা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। পাশাপাশি দিবসটির এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের বার্তাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেবার পাশাপাশি বিগত দিনগুলোতে দেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের সামগ্রিক অর্জন ও সীমাবদ্ধতাগুলোকে পর্যালোচনা করা হয়েছে। সর্বোপরি, নারায়ণগঞ্জ শহরকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারবান্ধব একটি শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সভায় সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সভায় উপস্থাপিত তথ্য মতে, দেশে প্রায় ৭ লাখ মানুষের প্রশমন সেবা বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন। দেশের মানুষের বয়স কাঠামোর পরিবর্তনের কারণে এই সেবার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। হসপিস এবং প্যালিয়েটিভ কেয়ার বলতে বোঝায় দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা বা মৃত্যুঝুঁকিপূর্ণ অসুস্থতা যেমন- ক্যান্সারে ভুগছে এমন রোগী ও তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সুরক্ষায় সাহায্য করা বা যত্ন নেওয়া। বিশ্ব হস্পিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস উদযাপনে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবক ও মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মীরা।
বক্তারা বলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে চিকিৎসা ব্যবস্থায় আবদ্ধ না রেখে একটি সামাজিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। কারণ মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে সমন্বিত না করতে পারলে জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত মানুষদের রোগ মুক্তি সম্ভব নয়, যার মাধ্যমে রোগীর ভোগান্তি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে রোগীর পরিবারের যত্নেরও উন্নতি করা সম্ভব। সেই সাথে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি-বেসরকারি আরও উদ্যোগ জরুরি।
উল্লেখ্য যে, তিন বছর মেয়াদী ‘মমতাময় নারায়ণগঞ্জ’ এই পাইলট প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় প্যালিয়েটিভ কেয়ারকে সংযুক্তিকরণ। নিরাময় অযোগ্য, জীবন সীমিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবনের প্রান্তিক সময়টুকু ভোগান্তি-যন্ত্রণাবিহীন এবং নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা। সেইসাথে প্রকল্পটি আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক কষ্টগুলো কমিয়ে জীবনের গুণগত মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে।