বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

|

বৈশাখ ৩ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা বললেন, সরকার যেন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ৮ এপ্রিল ২০২৫

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা বললেন, সরকার যেন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে

ফাইল ছবি

হঠাৎ নীতি পরিবর্তন হলে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সব সময়ই উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন। এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শুল্ক–কর, গ্যাস ও বিদ্যুতের মতো পরিষেবা নিয়েও বেগ পেতে হয় তাঁদের।

আজ মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিএসইজেড) পরিদর্শনের সময় দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে এমন মতামত তুলে ধরেন দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। তাঁরা বলেছেন, এসব বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো যেন রক্ষা করা হয়।

চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে আজ চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ৩৬ বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বিএসইজেড বা জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যান।

প্রতিনিধিদলটি জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে পৌঁছালে বিএসইজেড কর্তৃপক্ষ প্রথমেই তাঁদের অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে ধারণা দেয়। এরপর সেখানে অবস্থিত সিঙ্গারের কারখানা ঘুরে দেখেন তাঁরা।

এ সময় বিএসইজেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারো কাওয়াচি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কী ধরনের আধুনিক কারখানা স্থাপন করা সম্ভব, তার ভালো উদাহরণ হতে পারে বিএসইজেডে স্থাপিত সিঙ্গারের কারখানা। মাত্র ২০ মাস সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ করেছে সিঙ্গার। সে জন্য তারা বিনিয়োগ করেছে ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে এই কারখানায় প্রতি মাসে ৫০ হাজার পিস (ইউনিট) ফ্রিজ ও ১০ হাজার পিস (ইউনিট) টেলিভিশন তৈরি হচ্ছে।

তারো কাওয়াচি আরও বলেন, বৈশ্বিক মানের উন্নত পরিষেবা আছে এখানে। পণ্য ও কাঁচামাল আমদানির সুবিধার্থে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরেই বন্ডেড ট্রান্সপোর্টের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে বন্দরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন হয় না। এখানে যাঁরা বিনিয়োগ করবেন, তাঁদের কোনো অসুবিধার মুখে পড়তে হবে না।

বিনিয়োগকারীরা যা বললেন

আজ সাতটি দেশের ৩৬ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে যান। তাঁদের মধ্যে চীনের ১০ জন, জাপানের ৩, সৌদি আরবের ৩, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৩, যুক্তরাষ্ট্রের ৮ ও ভারতের ১ জন ছিলেন। এ ছাড়া বিদেশে বসবাস করেন (এনআরবি), এমন আট বাংলাদেশি ছিলেন।

চীনা মালিকানার তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান জিনিউ বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিকোলাস কী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা অনেক। অনেক চ্যালেঞ্জও আছে, যেমন অন্যতম বড় বাধা হচ্ছে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। আশা করি, তারা পরবর্তী সময়েও নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।’

চীনের জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান গ্রিন অ্যান্ড স্মার্ট এনার্জি অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারি জেনারেল উইও জিয়ানবো। তিনি আজ চীন থেকে বাংলাদেশে এসে বিএসইজেড পরিদর্শনে যান। প্রথম আলোকে জিয়ানবো বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজার সম্ভাবনা অনেক বেশি। দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ কেমন, সেটি দেখতেই আমি এসেছি। বাংলাদেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ দুটি বলে মনে হয়েছে। প্রথমত, অবকাঠামোগত দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, সাংস্কৃতিক বৈসাদৃশ্য। জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে এসে মনে হয়েছে, এখানকার অবকাঠামো পরিস্থিতি পুরোপুরি বিনিয়োগ উপযোগী।’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনিয়োগ সম্মেলনে এসেছেন প্রবাসী (এনআরবি) ইফতেখার মাহমুদ। বিএসইজেড ঘুরে তিনি বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এ ধরনের আরও অঞ্চল তৈরি করা সম্ভব। তাতে দেশে বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়বে। সে জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা।

একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি

আজ সকালে নিলর্ন বাংলাদেশ নামে সুইডেনের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে বিএসইজেড কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটি তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে। নিলর্ন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে তাদের একটি কারখানা আছে। এখন তারা এসইজেডে গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ উৎপাদনের জন্য আরও বড় পরিসরে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। তারা ধাপে ধাপে ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করবে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

মো. আব্দুল কাইয়ুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে স্বতন্ত্রভাবে কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে অনেক অসুবিধা আছে। সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে। সেই আশাতেই বিনিয়োগ করতে রাজি হয়েছি। সরকারকে আমরা সমস্যাগুলো জানিয়েছি। তাদের প্রতিশ্রুতি পেয়ে বিনিয়োগে রাজি হয়েছি। এখন সরকারও যেন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।’

জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, গতকাল সোমবার ও আজ বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পরিদর্শন করার পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অতীতে যেসব বাধা বা চ্যালেঞ্জ ছিল, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তা দূর করার জন্য কাজ করছে, বিশেষ করে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখানে নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা ও সুশাসনের অভাব ছিল, যে কারণে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতো। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।