রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

|

পৌষ ৭ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

প্রতিবেশী অমুসলিম হলে ইসলামের নির্দেশনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:৩০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রতিবেশী অমুসলিম হলে ইসলামের নির্দেশনা

প্রতীকী ছবি

যদি কারও কোনো প্রতিবেশী কিংবা কোনো আত্মীয় অমুসলিম হয়, ইসলামের নির্দেশনা হলো- তার সঙ্গেও প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের হক রক্ষা করে চলতে হবে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ দু’টি সম্পর্ক রক্ষা করার ওপর যথেষ্ট জোর দেওয়া হয়েছে।

সাহাবি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, একজন প্রতিবেশীর ওপর আরেকজন প্রতিবেশীর কী হক রয়েছে উত্তরে তিনি বললেন, ‘যদি সে তোমার কাছে ঋণ চায় তাহলে ঋণ দেবে, যদি তোমার সহযোগিতা চায় তাহলে তাকে সহযোগিতা করবে, যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তার খোঁজখবর নেবে, তার কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে তাকে তা দেবে, সে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়লে তার খোঁজখবর নেবে, যখন সে ভালো কিছু লাভ করবে তখন তাকে শুভেচ্ছা জানাবে, যদি সে বিপদে পড়ে তাহলে সান্ত্বনা দেবে, মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় শরিক হবে, তার অনুমতি ছাড়া তোমার ঘর এত উঁচু করবে না যে তার ঘরে বাতাস ঢুকতে পারে না-

কোনো ভালো খাবার রান্না করলে তাকে এর ঘ্রাণ ছড়িয়ে কষ্ট দেবে না বরং তার ঘরেও সে খাবার থেকে কিছু পৌঁছে দাও, যখন কোনো ফল কিনে তোমার বাড়িতে নেবে তখন হাদিয়াস্বরূপ তাকে সেখান থেকে কিছু দেবে, অন্যথায় সে ফল তুমি গোপনে তোমার বাড়িতে নেবে। এমন যেন না হয়, তোমার ছেলে এ ফল নিয়ে বাইরে বের হলো আর তার ছেলে তা দেখে অস্থির হয়ে পড়ল। ’ -ফাতহুল বারি খ. ১০, পৃ. ৫১৯

আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্ট বলেছেন, হজরত জিবরাইল (আ.) প্রতিবেশীর বিষয়ে আমাকে এমনভাবে উপদেশ দিচ্ছিলেন যে, আমি ভাবছিলাম- তিনি হয়তো তাদেরকে ওয়ারিশই বানিয়ে দেবেন। -সহিহ বোখারি ৬০১৫

আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার বিষয়ে নির্দেশনা তো আরও স্পষ্ট। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। -সহিহ বোখারি ৬১৩৮

প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে চলার এই যে নির্দেশনা, তাতে মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। এমনটি  বলা হয়নি- তোমার প্রতিবেশী কিংবা আত্মীয়  যদি মুসলমান হয়, ধার্মিক হয়, ভালো মানুষ হয়, তাহলে তার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে  চলবে। বরং প্রতিবেশী ও আত্মীয় যেমনই হোক, ধার্মিক হোক কিংবা না হোক, এমনকি মুসলিম হোক কিংবা না হোক, তার অধিকার অকাট্য ও অনস্বীকার্য। একজন মুসলমানকে এ অধিকার রক্ষা করেই জীবনযাপন করতে হবে।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের কিছু নির্দেশনা এমনও রয়েছে, যেখানে সুস্পষ্ট ভাষায় অমুসলিম আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক  রক্ষা করতে বলা হয়েছে। যেমন সূরা লুকমানে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করো। ’ -সূরা লুকমান ১৫

কোরআনে কারিমের উক্ত আয়াত থেকে স্পষ্ট প্রতিভাত হয়, যদি কোনো মুশরিক বাবা-মা তাদের মুসলিম কোনো সন্তানকে ইসলাম ধর্ম ছেড়ে দিয়ে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে শিরক করতে বলে, তাহলে তাদের এ আদেশটুকু মানা যাবে না। কিন্তু এমতাবস্থায়ও তাদের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে। বাবা-মায়ের অধিকারসমূহ আদায় করতে হবে।

প্রতিবেশীর অধিকার সম্বলিত যে সব হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেসবে মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি। সাহাবাদের জীবনী থেকেও এর দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর ঘটনা। একদিন তার ঘরে একটি বকরি জবাই করা হলো। খাবার রান্না হলে তিনি তার গোলামকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীর নিকট কি এ খাবার হাদিয়া পাঠিয়েছো আমাদের ইহুদি প্রতিবেশীকে কি এ খাবার দিয়েছো এরপর তিনি বললেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতিবেশীর বিষয়ে জিবরাইল আমাকে এত উপদেশ দিচ্ছিল, আমি মনে করছিলাম- সে হয়তো তাদেরকে ওয়ারিশই বানিয়ে দেবে। ’ -সুনানে তিরমিজি ১৯৪৩

সুন্দর আচরণও অনেক সময় দাওয়াতের ভূমিকা পালন করে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এমন মহানুভব আচরণে মুগ্ধ হয়েও তো অনেকে ইসলাম কবুল করেছেন এবং পরবর্তীতেও সাহাবাদের যুগ থেকে শুরু করে যারা ইসলামের সুন্দর আচারগুলো নিজেদের মাঝে লালন করে গেছেন, তাদের আচরণ নীরবে অমুসলিমদের ইসলামের দিকে আহ্বান জানাতো।