ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ। এখানে কোন বিনোদন কেন্দ্র নেই বললেই চলে! তবে সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষের বিনোদনের খোরাক ঘোচাচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী ঘেঁষা পৌনে তিন কিলোমিটার ওয়াকওয়ে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর ব্রীজের পশ্চিম পাড়ে নেমে ব্রীজের দক্ষিণপাশে রয়েছে এ ওয়াকওয়ে। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এ ওয়াকওয়েতে। ওয়াকওয়ের জন্য স্থানটি বেশ পরিচিতি পেলেও স্থানীয় মানুষের কাছে এটি ‘শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়’ হিসাবে পরিচিত।
এখানে পাবেন নির্মল বাতাস ও নীরিবিলি পরিবেশ। একপাশে টলটলে জলরাশি, আরেক পাশে পরিবেশ বান্ধব গাছ। রয়েছে খেলার মাঠ বা দৌড়ানোর খোলা জায়গা। খোলামেলা পরিবেশে স্নিগ্ধ প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে সিদ্ধিরগঞ্জের মানুষেরা উক্ত স্থানটিতে ঘুরতে আসেন।
নির্মল বাতাস উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে এই নদী তীরে বেড়াতে আসে অসংখ্য মানুষও। বিশেষ করে শুক্রবার ও বন্ধের দিনগুলোতে ভীড় বাড়ে এ ওয়াকওয়েতে। এই ওয়াকওয়েটিকে কেন্দ্র করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখানে ভাসমান বিভিন্ন দোকান রয়েছে যেমন: বাদাম, চটপটি, ফুসকা, ঝালমুড়ি, জিলাপী, শরবত ও আচারের দোকান। তাছাড়াও রয়েছে ফাস্টফুডের দোকান।
ভোরবেলা শরীর চর্চার স্থান হিসেবে অনেকে এই ওয়াকওয়েটিকে বেছে নিয়েছেন। সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ডায়াবেটিসের রোগী। তিনি প্রতিদিন এ ওয়াকওয়েতে আসেন। ওয়াকওয়েতে হাঁটতে এসে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় একটু শান্তিতে হাঁটার মতো কোন জায়গা নেই। রাস্তায় বেশিরভাগ সময় রিক্সা এবং অন্যান্য যানবহান চলে। এজন্য আমি প্রতিদিন সকালে এখানে (ওয়াকওয়ে) আসি।
ওয়াক ওয়ের পাশেই রয়েছে একটি ল্যান্ডিং স্টেশন (কাঁচপুর ব্রীজের দক্ষিণ পার্শ্বে)। বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী জাহাজ এখানে এসে ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে পণ্য নামিয়ে নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পাঠায়। নদীর পাড়ের ওয়াকওয়েতে হাঁটতে এসে ল্যান্ডিং স্টেশনে থেমে থাকা জাহাজগুলোতে বসে অনেকেই সময় কাটায়।
তেমনই একজন সিদ্ধিরগঞ্জের আরেক এলাকা কদমতলীর বাসিন্দা আতিক হোসেন। তিনি বলেন, আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করি। সব সময় ব্যস্ত থাকি যান্ত্রিক কলহের মধ্যে তবে সময় পেলে এখানে আসি। মাঝে মাঝে নদীর তীরে নোঙ্গর করা জাহাজের ওপর বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে খুব ভালো লাগে। এখন বর্ষাকাল, নদীতে পানি প্রচুর। দেখতে ভালো লাগে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি কমে যায়।
তিনি আরো বলেন, শিল্প-কারখানার দূষিত বর্জ্য মেশানো পানি সরাসরি নদী বা খালগুলোয় এসে পড়ে; যে পানিতে থাকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, ডাই, লবণ ও ভারি ধাতু। এর ফলে শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি হচ্ছে না, একইসঙ্গে পানীয় জলের উৎস দূষিত হচ্ছে। তাই আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই নদী দূষণ মুক্ত না করতে পারলে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের সম্মুখীন হতে হবে।
নৌকায় ভ্রমণ করতে খরচ কেমন লাগে জানতে চাইলে মাঝি ফয়সাল হোসেন জানান, পরিবার নিয়ে নৌ ভ্রমণ করতে চাইলে ঘন্টা প্রতি ৩শ টাকা লাগে। তবে ভীড় বেশী বা মানুষের চাপ বেশী হলে প্রতিঘন্টায় লাগে ৪০০ টাকা। এই নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পারেন দেশের অন্যতম খাদ্যগুদাম (সাইলো), সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশনের কিছুুটা অংশ, আদমজী ইপিজেড ও মেঘনা তেল ডিপো, পদ্মা তেল ডিপোর অংশবিশেষ।
পরিবার নিয়ে নদী ভ্রমণ করতে আসা বিথি আক্তার বলেন, আগে এটি মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ছিল। ওয়াকওয়ে নির্মাণের পর থেকে এটি একটি বিনোদনের জায়গা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে এখন মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন।
নারায়ণগঞ্জ পোস্ট