সংগৃহীত
বিয়ের পর থেকেই স্বামী আলতাফের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না আয়েশা সিদ্দিকার। এরই মধ্যে জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি মেয়ে সন্তান। যার নাম রাখেন বেলী। এরপরও স্বামীর সঙ্গে আর থাকা হলো না আয়েশার। ফলে মেয়েকে নিয়েই ছিল তার বসবাস।
কিছুদিন নারায়ণগঞ্জ জজকোর্টে আইনজীবী হিসেবেও কর্মরত ছিলেন আয়েশা। এরপর মেয়েকে নিয়ে দেশের মায়া ছেড়ে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানকার একটি স্কুলে ভর্তি করেন মেয়েকে। বর্তমানে তার বয়স হয়েছিল ১৪।
গত ২০ দিন আগে মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরেন আয়েশা। নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলা এলাকায় তার বড় বোনের বাসায় ওঠেন। কথা ছিল ২৩ ডিসেম্বর তারা আবার আমেরিকা চলে যাবেন। দেশে ফেরার সুযোগে মেয়ে বেলী তার বাবা আলতাফের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সেই সূত্র ধরে মেয়েকে তার বড় বোন মাহমুদার কাছে রেখে যান। আর সেখান থেকে আলতাফ তার মেয়েকে নিয়ে একটি বিয়ে অনুষ্ঠানের মধ্যে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথেই সব শেষ। ট্রাকের চাপায় সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। রিকশাযোগে যাওয়ার পথে শহরের চাষাঢ়ায় ইটবোঝাই ট্রাকচাপায় ঘটনাস্থলে মেয়ে বেলী তার বাবা আলতাফ হোসেন মারা যান।
আলতাফ হোসেন সোনারগাঁ উপজেলার সম্ভুপুরা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। নিজস্ব ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রি করতেন। আলতাফ হোসেন আর আয়েশা সিদ্দিকা একই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই সেখানে আর যেতেন না আয়েশা সিদ্দিকা।
মাহমুদা বেগম বলেন, আলতাফ হোসেনের সঙ্গে বেলীর মা অ্যাডভোকেট আয়েশা সিদ্দিকার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বেলী তখন ছোট ছিল। তখন আয়েশা কিছুদিন নারায়ণগঞ্জ জজকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলে। বেলী হওয়ার পর থেকেই মেয়ে নিয়ে আমেরিকায় চলে যায় আয়েশা। সেখানের একটি স্কুলে পড়াশুনা করতো বেলী। বেলীর নানি গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় ২০ দিন আগে তারা দেশে আসে।
তিনি আরও বলেন, ১৪ দিনের বেলীকে আমার কাছে রেখে কোর্টে যেতো ওর মা। বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ার পরও বেলীর সঙ্গে তার বাবার ঠিকই যোগাযোগ ছিল। সে জন্যই তার বাবা বেলীকে নিয়ে বিয়ে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য নিতে এসেছিল। আমার নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছিলাম বেলীকে। এখন আর কিছুই রইলো না। মেয়েকে নিয়ে আমেরিকা আর ফেরা হলো না।
ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলতাফ হোসেনের প্রথম সংসারের মেয়ে বেলী। সে তার খালার সঙ্গে পঞ্চবটি এলাকায় বসবাস করে। পারিবারিক এক বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে মেয়েকে খালার বাসা থেকে নিয়ে রিকশায় সোনারগাঁয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তবে রিকশা চাষাঢ়ায় মোড় ঘুরাতে গেলে পেছন থেকে ইটবাহী একটি ট্রাক চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে বাবা মেয়ে মারা যায়। পরে স্থানীয়রা ট্রাক চালক হাবিবকে (৩৮) আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করে। তবে রিকশা চালককে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। মামলা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।