ফাইল ছবি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদচারণের অভিযোগ এনে প্রভোস্ট বডির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে এ হলের ছাত্রীরা। তবে তা পরবর্তীতে গড়িয়ে রূপ নেয় উপাচার্য পদত্যাগের আন্দোলনে।
এ দাবিতে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনও শুরু করেছিলেন। তবে অনশনের ৭দিন পর ২৬ জানুয়ারি সকালে ভিসি অপসারণের আশ্বাসে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। একই দিন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে অনশন ভাঙার ১০দিন এবং আন্দোলনের ২৩ দিন পার হলেও ভিসি থাকবেন নাকি অপসারিত হবেন এ বিষয়টি এখন সব মহলের কাছে ধোঁয়াশা হয়ে দাঁড়িয়েছে!
এদিকে সরকারের উচ্চমহল থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে কোন ধরনের আশ্বাস না আসায় আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে অনশন ভাঙার পর থেকে আন্দোলনের ধরন পরিবর্তন করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এক দফা দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, ‘ড. জাফর ইকবাল স্যারের আশ্বাস এবং সরকারের হয়ে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। এজন্য ২৬ জানুয়ারি সকালে অনশন ভাঙেন এবং রোববার (৩০ জানুয়ারি) থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
শাবিপ্রবির এ আন্দোলনকারী আরো বলেন, ‘যতদিন এ ভিসি পদত্যাগ করবে না ততদিন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাবো’। তবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকালীন ক্লাসে ফিরবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কীভাবে ক্লাসে ফিরে যেতে পারি তা সকলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তীতে জানিয়ে দেবো’।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে আন্দালনরত আরেক শিক্ষার্থী ইয়াছির সরকার বলেন, ‘জাফর স্যার জানিয়েছেন চলতি সপ্তাহে আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে। আমরা দুই এক দিনের মধ্যেই সময়টা জানিয়ে দেবো। শিক্ষামন্ত্রী ক্যাম্পাসে এলে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা হবে’।
এদিকে প্রতিনিয়ত করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালু করে দিয়েছে। তবে শাবিপ্রবিতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী সেশনজট ও নির্দিষ্ট সময়ে পাস করা নিয়ে আশঙ্কা করছেন। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়ে ক্লাসে ফিরতে চান শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষাকার্যক্রম চালু করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাইছেন অনেকে।
শিক্ষাকার্যক্রম চালু বন্ধ থাকায় উদ্বেগ জানিয়ে ২০১৭-১৮ সেশেনের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা অনার্স শেষ বর্ষে আছি। এ বছর আমাদের স্নাতক শেষ হওয়ার কথা। ফেব্রুয়ারি-মার্চে আমাদের চতুর্থ বর্ষের (৪১) ফাইনাল পরীক্ষার কথা ছিল। তাই শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় পুনরায় সচল করতে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি’।
২০১৮-১৯ সেশনের তানিয়া সুলতানা নামের এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০২০ সালে ক্যাম্পাসে আসার পরপরই মার্চে করোনা শুরু হয়। এতে দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাস বন্ধের পর গত নভেম্বরে খুলেছে। তবে অপ্রত্যাশিতভাবে আবারো ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। তাই দ্রুতই শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধান চেয়ে ক্যাম্পাসে ফিরতে চাই’।
এদিকে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর বিষয়ে রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘রোববার থেকে আমাদের বি্শ্ববিদ্যালয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে কবে থেকে ক্লাস-পরীক্ষা চালু হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ক্লাস-পরীক্ষা চালু হলে তা সিন্ডিকেট সভা এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে’।
উপাচার্য অফিসিয়াল কার্যক্রম চালাচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভিসি এখনো কার্যালয়ে আসেননি, তিনি বাস ভবনে আছেন। সেখান থেকেই প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন’।
এদিকে শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্তই হোক না কেন, আমরা চাই ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক। শিক্ষার্থীদের ছাড়া আর সময় কাটছে না, তাদের নিয়ে আবারো ক্লাসে ফিরে যেতে চাই। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সব সমস্যার সমাধান হবে।
এর আগে ১৩ জানুয়ারি একটি হলের প্রভোস্টকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এ হলের ছাত্রীরা। পরে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালালে, পরের দিন হামলার প্রতিবাদ ও একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিপেটা, শটগান, গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরপর থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।