প্রতীকী ছবি
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার হাটখোলায় ক্রোনি অ্যাপারেলস লিমিটেডের গ্যাসের পাওনা বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর তিন দিন পর পুনরায় অবৈধভাবে সংযোগ দিতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করছে তিতাস।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলের বিপণন বিভাগের উপ মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশীদ বলেন, ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বিল বকেয়া থাকায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি কারখানাটির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর তিনদিন পর কারখানাটিতে বিস্ফোরণে ১৪ শ্রমিক দগ্ধ হন।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ওই পোশাক কারখানায় ‘গ্যাস লাইনের পাইপে’ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওই কারখানার অন্তত ১৪ জন দগ্ধ হন। দগ্ধদের ওইদিন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. তরিকুল ইসলাম জানান, দগ্ধ ১৪ জনের মধ্যে জিতু নামে ৪০ বছর বয়সি এক শ্রমিকের শরীরের ৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাকিদের শরীরের কিছু অংশ ‘অল্প পরিমাণে’ দগ্ধ হয়েছে; তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
তিতাসের বিপণন বিভাগের আঞ্চলিক উপ মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশীদ বলছেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণের বিষয়ে আমাদের জানায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যখন আমাদের জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের প্রধান লাইন চেক করে দেখতে পাই, গ্যাস লাইনে পুনরায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
“পুনরায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ব্যাপারে কারখানার কেউ আমাদের কিছু বলছেন না। কেউই কোনো তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন না।”
তিনি আরও বলেন, “এতে সংযোগটি যে পুনরায় কারখানা কর্তৃপক্ষই দিয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে।”
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রত্যক্ষদর্শী কারখানার দুই শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, কয়েকদিন আগে কারখানার কেটে দেওয়া গ্যাস লাইন ওয়েল্ডিং শ্রমিকরা মেরামত করছিলেন, তখন পাইপ ফেটে আগুন লাগে।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি নূরে আযম বৃহস্পতিবার বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, গ্যাসের লাইনে মেরামতের কাজ করতে গিয়ে আগুনে ১৪ জন দগ্ধ হয়েছেন। গ্যাসের লাইন বৈধ নাকি অবৈধ তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।”
এদিকে, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস, কলকারখানা অধিদপ্তর ও পুলিশসহ পাঁচ সদস্যের কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী বাইন হীরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ নেওয়া হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ব্যাপারে ক্রেনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএইচ আসলাম সানির সঙ্গে তার দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আহসান হাবীব সাংবাদিকদের বলেন, “কারখানার পাশেই রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। এজন্য আমরা আমাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন মাটির কয়েক ফুট নিচে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছি। ঘটনার সময় কিছু ওয়েল্ডিং শ্রমিক পাইপলাইন মেরামতের কাজ করছিলেন।”
সূত্র: বিডি নিউজ।