বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

|

অগ্রাহায়ণ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুট নিয়ে বিপাকে রেল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ১০ জুলাই ২০২৪

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুট নিয়ে বিপাকে রেল

প্রতীকী ছবি

রাজধানী-লাগোয়া জেলা নারায়ণগঞ্জ। সেখান থেকে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকায় আসেন ট্রেনে চেপে। প্রতিদিন এ পথে ১৬ জোড়া ট্রেন আসা-যাওয়া করে। সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় এ রেলপথটি ২০১৪ সালে ডাবল লাইন করতে প্রকল্প নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের ১০ বছরের মাথায় এবার ঠিকাদারকে কার্যাদেশের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরে তা পাঠানো হতে পারে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (সিসিজিপি)।

এর আগে প্রকল্পের কাজ ফেলে সরে গেছে একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। ওই ঠিকাদারকে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে নতুন করে দরপত্র আহ্বান শেষে এখন কার্যাদেশের দিকে যাচ্ছে রেল। চুক্তির অবশিষ্ট কাজসহ নতুন প্যাকেজ নির্ধারণ করে দরপত্র মূল্যায়ন সম্পন্ন হয়েছে।

সূত্রমতে, আগের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। রেলের একটি পক্ষ বলছে, কাজ ফেলে সরে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কালো তালিকাভুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন অনেকে। তবে কেউ কেউ বলছেন, ঠিকাদারকে সময়মতো কাজ বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি- এটাও ঠিক। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটি রেলের কাছে বিল পায়। বরং ক্ষতিপূরণ চেয়ে উল্টো মামলা করারও সুযোগ আছে ওই সময়

কার্যাদেশ পাওয়া মেসার্স পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না লিমিটেডের। বাস্তবতা হচ্ছে, সর্বনিম্ন দরে কাজ পেয়ে বিপাকে পড়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। লোকসানের কারণে সুযোগ খুঁজতে থাকে। সময়মতো সাইট বুঝিয়ে না দেওয়া এবং বিল বকেয়া রাখার সুযোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও রেলওয়ের মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন টানাপড়েন চলে। একপর্যায়ে সিঙ্গেল লাইনকে ডাবল লাইন করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পরে উভয় সংস্থার মধ্যে জমি রদবদলের মাধ্যমে সেই অনিশ্চয়তা কাটে। এ প্রকল্পের শুরুতে ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে প্রথমে ঘটে তুঘলকি কারবার। প্রতিষ্ঠানটির টেন্ডার ড্রপিংকে কেন্দ্র করে খোদ রেল ভবনে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ চুক্তি বাতিলের জন্য রেলওয়েকে চিঠি দেয় চীনা প্রতিষ্ঠানটি। এরপর পাওনা পরিশোধের জন্য একাধিক চিঠি দেয়। তাই নতুন দরপত্রে প্যাকেজ ডব্লিউডি-১ চুক্তির অসমাপ্ত কাজের অসমাপ্ত এবং নতুন প্যাকেজ-ডব্লিউডি-৩ একত্রীকরণ করে ডিজাইন, সুপারভিশন, ডিফেক্ট লায়াবলিটির সংস্থান রেখে কার্যাদেশ দেওয়া হচ্ছে। নতুন দরপত্রে ১২টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এর মধ্য থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে রেসপনসিভ বিবেচনা করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। সার্বিক বিবেচনায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের ওয়ার্কস প্যাকেজ ডব্লিউডি-৩ : ‘কনভারসন অব এগজিস্টিং মিটারগেজ লাইন ইন টু ডুয়েলগেজ লাইন অ্যান্ড কমপ্লিশন অব ব্যালেন্স ওয়ার্ক অব নিউ ডুয়েলগেজ লাইন ইন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশন’ কাজে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশের সুপারিশ করা হয়েছে।

তার আগে আগে পূর্ত নির্মাণ প্যাকেজে চীনা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৯ জুন। চুক্তিমূল্য ২৬৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। কাজ শুরুর তারিখ ছিল ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৩ সালের ১৫ মার্চে চুক্তি বাতিলের চিঠি দেয়। কারণ হিসেবে তাতে উল্লেখ করা হয়- সময়মতো পাওনা পরিশোধ না করা, অতিরিক্ত কাজের বিল পরিশোধ না করা এবং প্রকল্পের সাইট বুঝে না পাওয়া। এবার ১৮ মাসের বাস্তবায়নকাল বিবেচনায় নতুন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে রেল।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী আমাদের সময়কে জানান, নতুন করে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। এ সংক্রান্ত নথি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপর তা যাবে সিসিজিপিতে।

জানা গেছে, প্রথমবার দরপত্র নিয়ে রেল ভবনে ঠিকাদারের এক পক্ষ গোলাগুলি করে। কাজ পায় পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না। এ ঠিকাদার শুরু থেকেই ধীরগতিতে কাজ করছিল। এদের কাজে অসন্তুষ্ট ছিল রেলওয়ে। তবু কাজ এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রকল্পের মূল অনুমোদিত মেয়াদ ২০১৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন। ২০১৫ সালে জিওবি এবং ডিআরজিএ-সিএফ অর্থায়নে ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। ডিপিপিতে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনটি ডুযেলগেজে রূপান্তরের বিষয়টি বাদ পড়ে। পরে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। সর্বশেষ অনুমোদন অনুযায়ী ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির জমি বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে অনেক দিন ভোগান্তি ছিল। রেল মন্ত্রণালয় ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মধ্যে এ নিয়ে চিঠি চালাচালি এবং বৈঠক হয়েছে অনেকবার। নির্মাণকাজের সাইটে অনেক স্থাপনা ছিল। কিছু স্থাপনা সরানোর পর ২০১৭ সালের ১ আগস্ট কাজ শুরু হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন উপযোগী সাইট ক্লিয়ারেন্স দেওয়া যায়নি তখন। কারণ নারায়ণগঞ্জ স্টেশন এলাকায় ইজারাদাররা ১৩টি রিট মামলা করে। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ স্টেশনের ডাউন ফেসিং পয়েন্টের কাছে ৩০০ মিটার ডাবল লাইনের উপযোগী না থাকা, দফায় দফায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সফলতা না আসা, বিআইডব্লিউটিএর মাধ্যমে রেলের জমিকে তীরভূমি (ফোরশোর) দাবি করা ইত্যাদি বিপত্তি ছিল। এরপর এক এক করে সমস্যাগুলোর সমাধান হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মধ্যে ১৮৮৫ সালে ১৪.৯৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মিটারগেজ রেলপথ নির্মিত হয়।