বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

|

মাঘ ২২ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

বারান্দায় খাড়াইছিল আর হুট কইরা গুল্লি, মা হইয়া মাইয়্যারে বাচাইতে পারি নাই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১ আগস্ট ২০২৪

বারান্দায় খাড়াইছিল আর হুট কইরা গুল্লি, মা হইয়া মাইয়্যারে বাচাইতে পারি নাই

ফাইল ছবি

র (২৭ জুলাই) তার বাচ্চাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু উপর থেকে ছোঁড়া একটি গুলিতে সন্তানকে নিজ বাড়ি দেখানোর সৌভাগ্য হয়নি গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করা এই নারীর। গেলো ২১ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আন্দোলনকারী আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছিল। এতে উত্তাল ছিলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত। সেইদিন টিয়ারশেল, গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছিল সর্বত্র। এমতাবস্থায় মিজমিজি পাইনাদী দোয়েল চত্বর এলাকায় দৌড়াদৌড়ির আওয়াজ শুনে বিকেল বেলায় মায়ের ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখার আগ্রহে হেলেন দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এরমধ্যে হঠাৎ জানালার এসএস ছিদ্র হয়ে একটি গুলি লাগেন তার মাথার বাম পাশে। এতেই চিৎকার করে লুটিয়ে পড়েন ফ্লোরে। পরিবারের সদস্যরা হাও মও করেও তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তাকে। তবে, চিকিৎসক জানিয়ে দেন হাসপাতালে পৌঁছানের আগ মূহুর্তে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। 

পিতা হারা পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিন নম্বর বোন এই সুমাইয়া। অভাবের তাড়নায় ভাইদের মতো নিজেও গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। চাকরি করাকালীন সময়ে সবশেষে দুই বছর আগে কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা জাহিদ হাসানের (তার স্বামী) সঙ্গে বিয়ে হয় তার। মেয়েটির স্বামীও একজন গার্মেন্টস কর্মী। সে কাঁচপুরের একটি ফ্যাক্টরিতে কর্মরত রয়েছেন। 

স্বামী-স্ত্রীর কর্মময় জীবনে সুখে-শান্তিতে কাটছিলো জীবন। সন্তান সম্ভাব্যের আগে স্বাস্থ্যের ভাবনায় চাকরি ছেড়ে দেন এই সুমাইয়া। পরবর্তী গেলো মে মাসের ১২ তারিখে ঢাকাস্থ মাতুয়াইল শিশু হাসপাতালে তার ফুটফুটে সুবাইয়া পৃথিবীর আলো দেখেন। এরপর থেকেই মা এবং ভাইদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন এই নারী। বেশ কয়েকদিন থাকার পর মৃত্যুর পরের শুক্রবার ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন "মা" আসমা বেগম (৪৪)। মা হয়ে মেয়েকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে আসমা বেগম বলেন, আমি মা হইয়া (হয়ে) আমার মাইয়্যারে (মেয়ে) বাচাইতে পারি নাই। আমার মাইয়া তার দুধের সন্তানরে হোয়াইয়্যা (শুয়িয়ে) বারিন্দায় খালি খাড়াইছিলো। হুট কইরা আমার মাইয়্যার কান্দন শুইনা আমি পাশের ঘর থেইকা দৌড়াইয়া আইছি। আইয়া দেখি আমার মাইয়া ছটফট করতাছে। পরে আমার পোলাসহ আরও মানুষ হাসপাতালে নিয়া গেলেও আমার মাইয়াডা আর বাঁচতে পারলো না। আমরা বিল্ডিংয়ের ৬ তলায় থাকি তাও গুলি আইলো! আমার নাতনির কি হইবো এহন?

নিহত সুময়াইয়ার আরও বলেন, তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ থানায়। কষ্টের জীবনযাপনের মধ্যে মহামারী করোনার সময়ে সুমাইয়ার পিতা তাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান। তখন থেকে তাদের সংসারে টানাপোড়েন বেড়ে যায়। খুব কষ্টে জীবনযাপন করে মেয়েটিকে বিয়ে দেন। তার মেয়েটি বেশ হাসিখুশি সময় পার করতেন সন্তান হওয়ার পর থেকে। 

সুমাইয়ার বড় বোনের জামাই (দুলা ভাই) বিল্লাল বলে, সুমাইয়া বারান্দায় দাঁড়ানোর দুই মিনিটের মধ্যে চিৎকার শোনা যায়। পরে আমার স্ত্রী এবং আমার শ্বাশুড়ি দৌড়ে গিয়ে দেখে ফ্লোরে ছটফট করছিল। রক্তে ভিজে গিয়েছিল বারান্দার ফ্লোর। আমরা তারাতাড়ি সাইনবোর্ডের প্রো- অ্যাক্টিভ হাসপাতালে নিয়ে যাই, কিন্তু তার আগেই ও মার গেছিলো।