বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

|

আশ্বিন ৩০ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

ড্রাইভার থেকে অর্ধশত কোটির মালিক পূর্বাচলের ত্রাস সাদ্দাম 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:৩৯, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

ড্রাইভার থেকে অর্ধশত কোটির মালিক পূর্বাচলের ত্রাস সাদ্দাম 

ফাইল ছবি

চড়েন কোটি টাকা মূল্যের গাড়িতে। হাতে লাখ দামের মোবাইল ফোন ও ঘড়ি। কোটি টাকা মূল্যের ডুপ্লেক্স বাড়িসহ কয়েক কোটি টাকা মূল্যের সম্পদের মালিক। সঙ্গে থাকে সুঠাম দেহের বডি গার্ড। পূর্বাচল উপ-শহরের মানুষের কাছে সে মুর্তিমান আতঙ্ক। অথচ গত ৬ বছর আগেও ফিটনেস বিহীন প্রাইভেটকার গাড়ি চালিয়ে জীবন সংগ্রাম চালাতে হতো তাকে।

বলা হচ্ছিল উপজেলার সদর ইউনিয়নের গুতিয়াবো এলাকার আব্দুল হালিম মিয়ার ছেলে সাদ্দাম হোসেনের কথা। সাদ্দাম হোসেন রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চিহ্নিত তালিকাভুক্ত মাদক কারবারী। তার নামে রয়েছে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা মাদকসহ ১০টির অধিক মামলা।

এসব মামলার কোনটায় জামিনে আবার কোনটায় পলাতক সে। পুলিশের সাবেক মহা-পরিদর্শক বেনজীর ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোঃ মোজাম্মেল হকের ছত্রছায়ায় সাদ্দাম হোসেন মাদকসহ অপরাধের সা¤্রাজ্য গড়ে তোলে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেনে। এছাড়া কৃষকের জমি বেহাত, মতের অমতে গেলে দলবেঁধে হামলা ভাঙচুর চালিয়ে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করায় স্থানীয়দের কাছে সাদ্দাম এক আতঙ্কের নাম।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপগঞ্জের ভুলতা থেকে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা পর্যন্ত ফিটনেসবিহীন প্রাইভেটকার চলাচল করে। গত ৬-৭ বছর আগে সাদ্দাম হোসেন ভুলতা থেকে কুড়িল বিশ্বরোড রুটে সেই ফিটনেসবিহীন প্রাইভেটকার চালাতো। পূর্বাচলের পাশে গুতিয়াবো এলাকায় আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটি নামে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন পুলিশের সাবেক মহা-পরিদর্শক বেনজির আহমেদ ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোঃ মোজাম্মেল হক। এ প্রকল্পটির সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর কোন সম্পৃক্ততা নেই। এ প্রকল্পের ভেতরে বেনজির আহমেদ ও গাজী মোজাম্মেল হকের দুজনেরই দুটি বাংলো বাড়ি নির্মাণ করেন। সাদ্দামের বাড়ি গুতিয়াবো হওয়ার সুবাদে এ প্রকল্পে জমি ব্যবসা শুরু করেন সাদ্দাম হোসেন। তার বদৌলতে পুলিশের সাবেক মহা-পরিদর্শক বেনজীরের সঙ্গে তার সক্ষ্যতা বাড়তে থাকে। সেই সক্ষ্যতাকে পুঁজি করে সাধারণ মানুষের জমিতে জোর পূর্বক বালু ভরাট, জমি জবরদখল, মাদক ব্যবসা, হত্যা, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। রূপগঞ্জ ইউনিয়নের গড়ে তোলেন তার নিজস্ব বাহিনী। এ বাহিনীর মাধ্যমের বেনজির ও মোজাম্মেল হকের হয়ে প্রায় ৩০০০ হাজার বিঘা জমিতে বালু ভরাটের কাজ করে সাদ্দাম। যার বেশির ভাগ জমিতেই জোর করে বালু ভরাট ও হুমকি দিয়ে নাম মাত্র দাম দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। সাদ্দামের মামা আওলাদ মিয়া বসান পূর্বাচলের নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় গড়ে তোলেন একাধিক জুয়ার আসর। যেখানে দিনে কয়েক লাখ টাকা জুয়াখেলা চলে। বেনজীর ও গাজী মোজাম্মেল হকের ছত্রছায়া ও স্থানীয় প্রভাবশালী মালিকের নাম ভাঙিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে সাদ্দাম বাহিনী। সাদ্দাম বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে না পারায় দিনদুপুরে ইয়াবা সেবন আর দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে মাদক কারবারিতে জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সী শিক্ষার্থীরাও। সম্প্রতি সাদ্দাম গুতিয়াবো এলাকার বাবুল মিয়ার ঘরে বসে ইয়াবা সেবনকালে সে নিজেই তার অন্য সহযোগীর মাধ্যমে ভিডিও করায়। ওই সহযোগীর সঙ্গে বিরোধ হলে ইয়াবা সেবনকালে রেকর্ড করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রশাসনের কাছে প্রকাশ করে। সাদ্দাম পরিচালনা ও মাদক বাণিজ্যের সম্রাট হিসেবে পরিচিত। গুতিয়াবো এলাকার আব্দুল হালিম মিয়ার ছেলে সাদ্দাম হোসেন ১টি হত্যা, একাধিক চাঁদাবাজি, জবরদখল, সন্ত্রাসী, চুরি ও ডাকাতিসহ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের অপরাধী হিসেবে ১০টির অধিক মামলাসহ আরো ৯টি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ৩০ মার্চ আমাল মিয়া হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৬ নাম্বার আসামী সাদ্দাম হোসেনকে রাজধানী ঝিগাতলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েন সাদ্দাম। এদিকে নিজের অপকর্মের সা¤্রাজ্যের অস্তিত্ব টেকাতে সাদ্দাম যুবলীগে যোগ দেন। অপরাধ সাম্রাজ্যের মাধ্যমে সাদ্দাম হোসেন গুতিয়াবো বাজার এলাকায় কিসমত আলী নামের এক ব্যাক্তির জমি জোর পূর্বক দখল করে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। গুতিয়াবো এলাকায় হাসান মিয়ার একটি মার্কেটটিও দখলে নিয়েছেন সাদ্দাম। শাহজালাল মিয়াসহ ওই এলাকার কমপক্ষে ১০ জনের নির্মাণ করা বাড়ি জমিসহ দখলে নিয়েছেন এই সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দাম হোসেন হেরিয়ার মডেলের কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি চড়েন যার নাম্বার ঢাকা মেট্রো-ঘ ১২-১৬৬০। এছাড়া সাদ্দাম সুঠামদেহের অধিকারী বডিগার্ড নিয়ে চলেন। যাদের বেতন প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা। এছাড়া গুতিয়াবো এলাকা নীল রংয়ের আরো একটি বাড়ি রয়েছে সাদ্দামের যেটিতে তার মা থাকেন। এছাড়া পূর্বাচল ও আশপাশের এলাকায় সাদ্দামের প্লট ও জমি রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, গত ৫ ই আগষ্ট সরকার পতনের দিন থেকে সাদ্দাম পলাতক থাকলেও তার বাহিনীর লোকজন দিয়ে অপরাধ সা¤্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সাদ্দাম যুবলীগের যোগ দিলেও আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর সে তার অপরাধ সা¤্রাজ্য ঠিক রাখতে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে।
 
এদিকে, আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটির ভেতর বেনজিরের বাংলো বাড়িটি সাদ্দামের মাধ্যমের করা। এ আবাসন প্রকল্পে সাবেক আইজিপি বেনজীরের আহমেদ সাদ্দামের মাধ্যমে প্রেমানন্দ সরকারের ছেলে মেয়েদের কাছ ১০ কোটি মূল্যের জমি ৫৫ শতাংশ জমি মাত্র ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বিনিময়ে কিনেন। এসময় জমি বিক্রেতারা জমির পুরো মূল্য দাবি করলেও সাদ্দাম তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ওই হিন্দু পরিবারকে জিম্মী করে কম মূল্যে জমি লিখে নেন।
 
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পূর্বাচল উপ-শহরে আতঙ্কের নাম সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দামের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। বেনজীর ও মোজাম্মেল হক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় সাদ্দাম মাদকসহ অপরাধের স্বর্গ্যরাজ্য বানিয়ে ফেলেছে পূর্বাচলকে। একসময় সাদ্দাম গাড়ির ড্রাইভার থাকলেও মাদকসহ নানা অপকর্ম করে কোটি কোটি টাকা মালিক বনে গেছেন। এদিকে মাদক বিক্রি বাড়াতে প্রথমে ফ্রিতে মাদক সেবনের সুযোগ দেয় সাদ্দাম। আড্ডায় প্রতিদিন অনেকের সাধারণ ডায়রীতে বিবাদী সে। বেপরোয়া সাদ্দাম যোগ দেয় নতুন নতুন মাদকসেবী। এদিকে পুলিশের সাবেক মহা-পরিদর্শক বেনজীরের গুতিয়াবো এলাকার বাড়ি থেকে গত ১৫দিন আগে অবৈধ মালামাল সাদ্দাম তার লোকজন দিয়ে সরিয়ে ফেলে বলে স্থানীয়রা জানান। এ কারণে দূদক ও জেলা প্রশাসন বেনজীরের রূপগঞ্জের বাড়ি থেকে আসবাবপত্র ছাড়া অন্য কোন অবৈধ জিনিস খুজে পাননি। সাদ্দাম আগে যুবলীগে যোগ দিলেও সে এখন দল পাল্টে বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। আমি জোর পূর্বক কারো জমি দখল করিনি।
 
রূপগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত জুবায়ের হোসেন বলেন, অপরাধী যেই হউক কেউ আইনের উর্ধে নয়। সাদ্দামের ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।