ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া ও অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ চুনা কারখানা (চুনা ভাট্টি)। এ চুনা কারখানা সরানোর দাবিতে এলাকাবাসী স্মারকলিপি দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তর, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
অনতিবিলম্বে এসকল কারখানাগুলো দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানান ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা।
স্মারকলিপিতে এলাকাবাসী জানান, সোনারগাঁওয়ের ভাটিবন্দর এলাকায় নূর আলমের মালিকানাধীন তিনটি চুনাভাট্টি, রয়েল রিসোর্টের সামনে একটি চুনাভাট্টি রয়েছে। মনসুর হোসেনের মালিকানাধীন পিরোজপুর ইউনিয়নের সুখতারা পাম্পের সামনে মোজাফ্ফর ফাউন্ডেশনের ভিতরে চারটি চুনাভাট্টি রয়েছে, বাবুল মিয়ার মালিকানাধীন মেঘনাঘাট মোনায়েম সুগার মিল সংলগ্ন তিনটি ভাট্টি রয়েছে। সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন মেঘনা ঘাট এলাকায় দুটি চুনা কারখানা রয়েছে। এসকল চুনা কারখানার মালিকরা পরিবেশের ছাড়পত্র ও তিতাস গ্যাসের অনুমতি না নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে চুনা কারখানা পরিচালনা করায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিবেশের ছাড়পত্র ও ট্রেড লাইসেন্স না নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছেন এসকল অবৈধ চুনাভাট্টি।
স্থানীয়রা জানান, পরিবেশ দূষণকারী এসব চুনা কারখানা গুলোতে দিনরাত জ্বলছে আগুন। আগুনে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ার কুন্ডলীর সঙ্গে উড়ছে ছাই। এই ধোঁয়ার কারণে আশপাশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। চুনাভাট্টির গ্যাসের কারণে নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর। যার ফলে আশপাশের অধিকাংশ বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের নিদারুন বেগ পেতে হচ্ছে। তবে মালিকপক্ষ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ার কারণে তাদের কোনভাবেই আইনের আওতায় আনা যায়নি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে এসরকার সকল কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি।
ভাটিবন্দর এলাকার আফতাব উদ্দিন জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জনস্বাস্থ্যর ক্ষতিকর চুনাভাট্টির মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করার পরও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।
পিরোজপুর এলাকার আক্কেল আলী জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে এসকল চুনা কারখানা অবৈধভাবে পরিচালনা করে। বর্তমান সরকার এসকল অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।
চুনা কারখানার মালিক নূর আলম, মনসুর হোসেন জানান, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে কয়েকবার ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেও পাই নি। পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই আমরা চুনা কারখানাগুলো পরিচালনা করছি। অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে কিভাবে কারখানা পরিচালনা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা কোন সদত্তোর দিতে পারেন নি।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ এইচ এম রাসেদ বলেন, যেসকল চুনা কারখানা গড়ে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
তিতাস গ্যাস এন্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড এর সোনারগাঁ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জাফরুল আলম জানান, চুনা কারখানার মালিকরা অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ফের এসকল অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোন অবস্থাতেই চুনা কারখানা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এসকল মালিককে তাদের চুনা কারখানা অন্যত্র সরানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।