শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

|

বৈশাখ ৫ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

বউমেলায় ভক্তদের ঢল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

বউমেলায় ভক্তদের ঢল

ফাইল ছবি

ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বউমেলা শুরু হয়েছে। বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলার ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে জয়রামপুর গ্রামে বটতলায় এ মেলা শুরু হয়। মেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা তাদের স্বামী-সন্তানদের মঙ্গল কামনায় পূজা অর্চনা করে থাকেন। 

এ মেলাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেকে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর মেলা ও বটবৃক্ষকে সিদ্ধেশ্বরী দেবী বলে আখ্যায়িত করেন। শত বছরের পুরনো এ বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। বটবৃক্ষের নিচে সারিবদ্ধভাবে বিভিন্ন ফল-ফলাদির ঝুড়ি নিয়ে পূজা-অর্চনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন নববধূ থেকে শুরু করে বয়স্ক নারীরা। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন সনাতনী কুমারী মেয়েরা। সবার দৃষ্টি থাকে বটবৃক্ষের দিকে। 

সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দুপুর হওয়ার আগেই চারদিকে বাড়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পদচারণা। এ বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের দ্বিতীয় দিন পুজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে এ মেলা শুরু হয়েছে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জানান, সনাতনীদের কাছে এ বটবৃক্ষটি হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বটবৃক্ষটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামে পরিচিত। বিশেষ করে সনাতন ধর্মের নারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে সিদ্ধেশ্বরী কালীতলার এ বউমেলার জন্য। এ বিশ্বাসেই এখানে বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৈশাখী ফলের ভোগ নিয়ে দলে দলে হিন্দু নারীরা হাজির হন। পাশাপাশি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর উড়ানো ও পাঠা বলি দেওয়া হয় বৃক্ষ দেবতার পদতলে। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে- এ কামনাতেই পূজার আয়োজন করেন নারীরা।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার সকালে সিদ্ধেশ্বরী বটতলায় পূজার আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বউমেলা। আগামী বৃহস্পতিবার এ মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। মেলায় পূজা-অর্চনা ছাড়াও বাঙালি সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য মৃৎশিল্পীদের তৈরি নানা রঙয়ের টেপা পুতুল, হাতি, ঘোড়া, ময়না, টিয়া, বাঘ-ভাল্লুক, হাঁড়ি পাতিল পাওয়া যায়। মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, কাঠ ও বাঁশের তৈরি লোকপণ্য ছাড়াও মেলায় পাওয়া যায় বাহারি মিষ্টান্ন।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, বউমেলায় পূজা-অর্চনা করলে নারীরা পুরোনো বছরের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া-বিবাদকে দূর করে নতুন বছরে স্বামীর সংসারকে ধন-ধান্যে ভরে তুলতে পারেন। এখানে অনেক ভক্তদের দেবীর নামে পাঠা ও কবুতর উৎসর্গ করতে দেখা যায়। অনেকের বিশ্বাস বটমূলের মাটি শরীরের মাখলে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রেমে সফল ও দ্রুত বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য এ স্থানের মাটি খুবই উপকারী মনে করে দিনটিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকেরা মাটি সংগ্রহ করেন।

মেলায় আসা জয়রামপুর গ্রামের নববধূ আরতী রানী সূত্র ধর জানান, সংসারের সুখ শান্তি ও স্বামী সন্তানের মঙ্গল কামনায় পূজা করতে এসেছেন তিনি। সেখানের মানত করে পূজাঅর্চনা করলে সংসারের কল্যাণ হয়।

পূজায় আসা ভট্টপুর গ্রামের কল্পনা রানী বলেন, প্রতি বছর এখানে পরিবারের মঙ্গল কামনায় পূজা-অর্চনা করে আসছি। এটি বেশ পুরোনো রীতি, বিয়ের পর থেকেই মঙ্গল কামনায় এ পূজায় অংশ নেন তিনি।

সিদ্ধেশ্বরী পূজার পুরোহিত রামপ্রদ ভট্টাচার্য্য জানান, বউমেলায় সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারীরা অংশ নিয়েছেন। এবারে পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার সকালে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পূজা-অর্চনা হয়ে মেলা শুরু হয়।

সিদ্ধেশ্বরী বটতলার পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নিলুৎপল রায় জানান, মঙ্গল কামনায় এ পূজার আয়োজন করা হয়। নতুন বছর যেন ভালো কাটে, সবাই যেন ভালো থাকতে পারি, শান্তিতে থাকতে পারি তাই এ পূজার আয়োজন করা হয়। এ মেলায় নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও অংশ নেন।