শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

|

বৈশাখ ১১ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

এক মাসে তিন শতাধিক খুন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৫:৩০, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

এক মাসে তিন শতাধিক খুন

প্রতীকী ছবি

দেশে গত মার্চ মাসে ৩১৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। প্রতিটি খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে।

সে অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন ১০টির বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। চলতি মাসেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
সর্বশেষ আলোচিত ঘটনার মধ্যে রয়েছে রাজধানীর বনানীতে তুচ্ছ ঘটনায় বেসরকারি প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ড। সম্প্রতি এ ধরনের তুচ্ছ কারণে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যাকাণ্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে বেশ কয়েকটি কারণ পাওয়া গেছে।

সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ে সামাজিক সহিংসতা চরম আকার ধারণ করায় এসব হত্যার ঘটনা ঘটছে। এতে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিজের ঘরও সময়ে সময়ে অনিরাপদ হয়ে উঠছে। কিছু ক্ষেত্রে সহিংসতার বলি হচ্ছে শিশু।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে গত মার্চ মাসে ৩১৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটে।
এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জে, ৬৬ জন খুন হয়েছে। চট্টগ্রাম রেঞ্জে ৬৫ জন, খুলনা রেঞ্জে ৩৫ জন ও মহানগরের মধ্যে ঢাকায় ৩৩ জনকে হত্যা কারা হয়।
এর আগের দুই মাস ফেব্রুয়ারিতে ২৯৪টি ও জানুয়ারিতে ৩০০টি হত্যা মামলা হয়। এসব হত্যাকাণ্ড বিশ্লেষণ ও পুূলিশের তদন্ত অনুযায়ী বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেসব কারণ পাওয়া গেছে, এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ, স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্ব,  মাদকদ্রব্য বেচাকেনা, আধিপত্য বিস্তারের জেরে দখল, পারিবারিক বিরোধ, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, সহিংস আচরণ, সম্পত্তির লোভ, পারিবারিক বিরোধ ও  ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়া।

সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সামাজিক, পারিবারিকসহ সব ধরনের অপরাধ বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ মানুষের নৈতিক অধঃপতন ও লোভ। পাশাপাশি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ না থাকা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। একই সঙ্গে অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ও মনোগত বিষয়ের পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহারও দায়ী। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবও রয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহযোগী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের  ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য  অভিযোগ ও অপরাধের ঘটনায় পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। ’

এদিকে তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক পুলিশ বলছে, দেশে প্রায় প্রতিদিন একাধিক হত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা বাড়ছে। তবে সব অপরাধীকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক উমর ফারুক বলেন, দেশে এই মুহূর্তে আইন প্রয়োগের জায়গাটি দুর্বল। তাই আদর্শ ও মূল্যবোধের
অবক্ষয় রোধে আইন প্রয়োগে আরো কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক অন্য ব্যবস্থাগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
সাম্প্রতিক ঘটনা : সর্বশেষ গত শনিবার বনানীতে দুই তরুণীর কথা-কাটাকাটির জেরে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
গত সোমবার ফেনীর সোনাগাজীতে বিএনপির এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঢাকার মগবাজার এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপে আধিপত্য বিস্তারে এক বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিন কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় হাওরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ছুরি মেরে মোকারম মিয়া নামে একজনকে হত্যা করা হয়।
গত শনিবার চট্টগ্রামের রাউজানে নিজ বাসায় ভাত খাওয়ার সময় মানিক আব্দুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গত ২০ এপ্রিল গাজীপুরের টঙ্গীতে দুই শিশুসন্তান মালিহা আক্তার ও মো. আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরকে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মা আলেয়া বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই দিন টেকনাফে গণপিটুনি ও ছুরি মেরে মো. নজিবুল্লাহ নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়। ১৮ এপ্রিল রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে তার বাবা নান্টু মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিন জায়গাজমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে আবুল কাশেম নামের এক বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ