
ফাইল ছবি
২০২২ সালের ১০ অক্টোবর ঘটা করে উদ্বোধন করা হয় নারায়ণগঞ্জ বন্দরের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। কিন্তু উদ্বোধন করার পর এক বছর পার না হতেই সেতুতে থাকা বৈদ্যুতিক খুটির সংযোগ ক্যাবল চুরি হয়ে যাওয়ায় সেসময় থেকে অদ্যাবধি জ্বলছে না কোনো আলো। প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় পার হলেও সন্ধ্যার পর থেকেই ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয় সেতুর ওপরসহ আশপাশের এলাকায়। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা, প্রায় সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। স্থানীয় অসাধু লোকদের এমন কর্মে এখানে নতুন ক্যাবল টানা হলে আবারও চুরি হতে পারে, সেই ভয়ে বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি সওজ (সড়ক ও জনপথ)।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। যার নির্মাণ মেয়াদ ছিল ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নানা কারণে সেতুর নির্মাণকাজ শুরুই করা হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে এবং সেতুর উদ্বোধন করা হয় ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর। শুরুতে এর নির্মাণ ব্যয় ৩৭৭কোটি ৬৩ লাখ টাকা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু সেতু নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে বন্দরবাসীর দূরত্ব কমাবে-এমন কথা হলেও প্রকৃত অর্থে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
এই সেতুটি মূলত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে অর্থাৎ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সঙ্গে রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা ও চিটাগাং অঞ্চলের দূরত্ব কমানোসহ নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা শহরের ওপরের চাপ কমানোর জন্য করা হয়েছে। পদ্মা সেতু পার হয়ে এই সেতুটি ব্যবহার করে এই সড়ক ব্যবহার করার মাধ্যমে এসব এলাকার যানবাহন চলাচল করবে। অথচ এই সেতু নির্মাণে প্রায় একযুগ সময় ব্যয় হলেও এই সময়ের মধ্যে অর্থাৎ সেতু উদ্বোধনের পূর্বে পদ্মা সেতুর সঙ্গে এই তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সংযোগ সড়কের কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। গ্রহণ করা হয়নি মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের সংস্কার কাজের পরিকল্পনাও।
সেতু উদ্বোধনের পর আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত অটো ইজিবাইক, সিমেন্ট কারখানার অতিরিক্ত ওজনের কিছু সিমেন্টবাহী গাড়ি ছাড়া এখানে নেই কোনো গাড়ি চলাচলের ব্যস্ততা। প্রশাসনের অপরিকল্পিত উদ্যোগ এবং বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়াকেই এজন্য দায়ী বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এই বিষয়ে ট্রাক ড্রাইভার আমান উল্লাহ বলেন, ‘আমি এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করি। প্রতিদিন দুই থেকে তিন বার এই সড়ক দিয়ে আমাকে যাতায়াত করতে হয়। প্রায়ই রাত ১১টা ১২টার দিকে গাড়ি নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে এই সেতু দিয়ে আসতে হয়। আলোবিহীন সড়কে ভূতুড়ে পরিবেশে গাড়ি চালাতে খুবই অস্বস্তি হয়। প্রায়ই সেতুর ওপর ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে।’
আসাবুদ্দিন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এই সেতুতে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় মদনগঞ্জ সড়কের সেতুর নিচে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। মদনগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি এই সেতুর খুব কাছাকাছি অবস্থিত। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পুলিশের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
এখানকার নিরাপত্তার বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুতে ক্যাবল চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য সেতুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের তরফ থেকেও সেতু এলাকায় নজরদারি বাড়াতে হবে।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা সড়ক ও জনপথ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, ‘বন্দরে অবস্থিত তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর ক্যাবল লাগানোর জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু সেখানে বৈদ্যুতিক ক্যাবল লাগানোর পর যদি আবারও চুরি হয়, তাহলে মেরামত করে কোনো লাভ হবে না। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় যেন চুরি না হয় সেজন্য স্থানীয় জনগণকেও সচেতন হতে হবে।’