
শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় তৈরি পোশাক কারখানায় ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার দুপুর ১২টা থেকে তিন ঘণ্টা ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উপজেলার আউখাবো এলাকায় রবিনটেক্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের শ্রমিকদের সঙ্গে এ সংঘর্ষ চলে বলে জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম জানান।
এ ঘটনায় ১০ জনকে আটকের কথা জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
তবে আটকদের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
এদিকে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে কারখানার শ্রমিক ছাড়াও পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্য রয়েছেন।
পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে রবিনটেক্স কারখানার কয়েকজন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। প্রতিবাদে চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা বুধবার সকালে কারখানার সামনে জড়ো হন। এর আগেও দুই দিন তারা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন।
বুধবার অন্যান্য শ্রমিকরাও তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কাজ বন্ধ রেখে কারখানার ভেতরেই অবস্থান করেন। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা থেকে বেরিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এতে ব্যস্ততম মহাসড়কটিতে যানজট দেখা দিলে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
রবিনটেক্স কারখানার দুজন শ্রমিক বলেন, মালিকপক্ষ বিনা নোটিশে তাদের শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই করেছে। মার্চ মাসের বেতন-বোনাসও তাদের আংশিক পরিশোধ করা হয়েছে। শ্রমিকরা ন্যায্য দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে কারখানার ভেতরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। বিনা উসকানিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের লাঠিপেটা করে।
কারখানাটির অন্তত ৩৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তারা। আহতরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তবে কারখানাটির মহাব্যবস্থাপক (অ্যাডমিন) আদনান শামসের দাবি, শ্রম আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী ১০ থেকে ১২ জনকে ছাঁটাই করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “সকালে শ্রমিকরা অযৌক্তিক কারণে উৎপাদন বন্ধ করে কারখানায় ভাঙচুর এবং কর্মকর্তাদের মারধর করেন। কেননা আইন মেনেই কয়েকজন শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছিল। কারখানার ভেতরে ভাঙচুর-লুটপাটের পর বাইরে গিয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। বহিরাগত লোকজনও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।”
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট, শিল্প পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপারসহ অন্তত ১৫ জন সেনা ও পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী ইসলাম।
তিনি বলেন, “ছাঁটাইসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে দুপুরে শ্রমিকরা মহসড়ক অবরোধ করলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য জেলা পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে ক্ষুব্দ হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমরা লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।”
বিক্ষুব্ধরা তার সরকারি গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে বলে জানান মেহেদী ইসলাম। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ঘটনার পর কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।