রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

|

চৈত্র ২৮ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

শ্বশুরবাড়ির ভয়ে স্ত্রীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে থানায় তরুণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ১১ এপ্রিল ২০২৫

শ্বশুরবাড়ির ভয়ে স্ত্রীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে থানায় তরুণ

সংগৃহীত

প্রেমের সম্পর্কের জেরে পরিবারের অসম্মতিতে পালিয়ে বিয়ে করেন শাকিল হোসেন (২৪) ও মিতা খাতুন। দুজনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায় হলেও বিয়ের পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে থাকতেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্যের জেরে তিন দিন আগে ‘আত্মহত্যা’ করেন মিতা। রূপগঞ্জ থানা-পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্ত করে শাকিলের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।

শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অভিযোগ, পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে মিতাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে দেন শাকিল। এ ঘটনায় শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ‘মারধরের ভয়ে’ স্ত্রীর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গ্রামে না গিয়ে বাগমারা থানায় যান শাকিল। পরে তাকে হেফাজতে নিয়ে লাশ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে রাজশাহীর বাগমারা থানায় এ ঘটনা ঘটেছে। মারা যাওয়া মিতা খাতুন (১৮) উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের জালাল উদ্দিনের মেয়ে। পুলিশি হেফাজতে থাকা শাকিল হোসেন একই ইউনিয়নের ভটখালী গ্রামের বাসিন্দা। তাদের সাত মাস বয়সী একটি শিশুসন্তান আছে। পেশায় এক্সকাভেটরচালক (খননযন্ত্র) শাকিল পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বসবাস করতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে বাগমারা থানায় ঢোকে লাশবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্স। এ সময় শাকিল নামের এক তরুণ পুলিশকে জানান, অ্যাম্বুলেন্সে তার স্ত্রীর লাশ আছে। তিন দিন আগে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে এবং নারায়ণগঞ্জে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন এমন আশঙ্কায় তিনি লাশ নিয়ে থানায় আসেন।

পুলিশ ও স্বজনেরা জানান, তিন বছর আগে মুঠোফোনে প্রেমের সম্পর্কের জেরে পালিয়ে বিয়ে করেন মিতা ও শাকিল। বিয়ের পর তারা নারায়ণগঞ্জে চলে যান। সেখানে এক্সকাভেটর চালাতেন শাকিল। পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (টিকটক) পোস্ট করতেন। গত মঙ্গলবার স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য হয়। এর জেরে স্ত্রীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে মিতা গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেন। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় শাকিল একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল লাশ হস্তান্তর করা হয়। খবর পেয়ে নিহত মিতার স্বজনেরা গতকাল লাশ আনতে নারায়ণগঞ্জে গিয়ে ফিরে আসেন। তার আগেই লাশ নিয়ে সটকে পড়েন শাকিল।

মিতার বাবা জালাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, জামাই এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। এই কারণে মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় বলে জানতে পেরেছি। তার মেয়েকে মেরে ফেলে লাশ জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়েছে। লাশটি বাগমারা থানায় আছে জানার পর আজ থানা থেকে লাশ নিয়ে এসেছি। শাকিলকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

অভিযুক্ত শাকিল পুলিশি হেফাজতে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শাকিলের বরাত দিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মিতা আত্মহত্যা করেছে বলে সে (শাকিল) জানিয়েছে। লাশ হস্তান্তর করতে দেরি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে কিছু লোক তাঁকে অনুসরণ করছিল, এই ভয়ে লাশ নিয়ে গোপনে চলে এসেছে।

তিনি বলেন, দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণে মেয়ে পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে লাশ দাফনের জন্য মেয়ের বাবার কাছে দেওয়া হয়েছে। শাকিল এখনো (বেলা তিনটা) পুলিশি হেফাজতে আছে। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

স্থানীয় যোগীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম জানান, শাকিল ও মিতা পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করার পর নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। দাফনের জন্য লাশ বাগমারা থানা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। এখন দাফনের প্রক্রিয়া চলছে।