প্রতীকী ছবি
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে রহিমা খাতুন (৭০) নামে এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছেন তার ছোট ছেলে আবু কাউছার রাজু। তারা হলেন- রহিমা খাতুনের মৃত্যু সময় তার বাসায় উপস্থিত থাকা কেয়ারটেকার আনিস ও গৃহপরিচারিকা পুতুল। । এছাড়া রহিমা খাতুনের উদ্ধারকৃত লাশের গলায় একটি দৃশ্যমান নখ দিয়ে দাবানো ক্ষত দেখা গেছে। একই সাথে ৭০ বছর বয়সী রহিমা খাতুন একটি হাত ৭০ ভাগ কাজ করতো না। পাশাপাশি তিন বছর যাবত ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
রহিমা খাাতুনের তিন নং সন্তান রাজু গণমাধ্যমকে এসব দাবি জানয়ি বলেন “আমার মায়ের মৃত্যু নিয়ে আমাদের বাড়ির কেয়ারটেকার আনিসের সাথে আমার বাবার বক্তব্যের ভিন্নতা মিলেছে । আনিস বলেছে, আমার মা রহিমা খাতুন বাথরুমের হাই কমোডে অজ্ঞান অবস্থায় বসা ছিল।
অন্যদিকে বাবা আব্দুর রব প্রধান বলেছেন, মায়ের লাশ বাথরুমে ভেন্টিলেটর সাথে ফাঁস দেয়া ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। মায়ের লাশ উদ্ধার ও মৃত্যু নিয়ে বাবা ও কেয়ারটেকার দু ধরণের বক্তব্যে সূত্রপাত থেকেই আমার সন্দেহ শুরু হয়। মৃত্যুর সময় মায়ের বাসায় ওই তিন জনই ছিলেন। আমার মায়ের একটি হাত প্রায় অকেজো। সে কিভাবে বাবার দেয়া ভাষ্যমতে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করলেন। আর মা আত্মহত্যা করলে মায়ের গলায় নখ দিয়ে দাবানো দৃশ্যমান ক্ষত চিহ্ন কেন হলো।
তিনি আরও দাবি করে জানান, মায়ের লাশ বাড়ির নীচের গ্যারেজ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মা বাথরুমে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচারণা চালানো হয়েছে। মূলত মায়ের লাশ আমার বাবা আব্দুর রব প্রধান ও বাড়ির কেয়ারটেকার তাদের দুজনের দেয়া ভাষ্যমতে বাথরুম থেকে তারা দুজনে উদ্ধার করেছে, সেই তথ্যই তারা পুলিশের কাছে দিয়েছে। এছাড়া মায়ের গলায় ক্ষত চিহ্ন দেখতে পেয়ে আমি বাবা ও ভাইদের সঙ্গে কারণ জানতে চাইলে তারা সবাই আমার ওপর ফুসে উঠে। এক পর্যায়ে বিভিন্ন আগত লোকজন আমাকে একটি ঘরে নিরাপদে আশ্রয় দেয়। সেখান থেকে আমি জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশকে জানাই।
রাজু জোর দাবি জানিয়ে আরও বলেন, তাই বাবা ও কেয়ারটেকারের দুজনের দু ধরণের বক্তব্য ও মায়ের গলায় দৃশ্যমান নখের ক্ষত চিহ্ন রহস্য উদঘাটন করতে হলে কেয়ারটেকার আনিস ও বাসার গৃহপরিচারিকা পুতুলকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ জরুরী বলে মনে করছি।
এদিকে রহিমা খাতুনের ময়না তদন্ত সম্পন্নকারি নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) জহির উদ্দিন জানান, রহিমা খাতুনের মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তার ব্রেন এবং হার্ট পরীক্ষার জন্য ঢাকা পাঠানো হয়েছে। পোস্ট মর্টম রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর রহস্য জানতে পারব। এছাড়া তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
এ বিষয়ে লাশ উদ্ধার করতে যাওয়া সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এস আই সোহাগ জানান, আমরা রহিমা খাতুনের লাশ বাড়ির নীচে গ্যারেজে গিয়ে দেখতে পেয়েছি এবং সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। মৃতের স্বামী রব প্রধান আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, তারা বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে নিজেরাই নামিয়েছিল।
প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার রাতে গোদনাইলের তাতখানার বৌবাজার এলাকার একটি বাসার ওই বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। রহিমা খাতুন বৌবাজার এলাকার আব্দুর রব প্রধানের স্ত্রী। এ ঘটনায় ওই সময় বৃদ্ধার স্বামী আব্দুর রব প্রধান বলছেন, ঘটনাটি আত্মহত্যা; কিন্তু তার ছেলের রাজু প্রথম থেকেই দাবি করছে মায়ের মৃত্যু তার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহীনুর আলম জানান ,ওই বাসায় স্বামী-স্ত্রী ও কাজের মেয়ে ছিল। লাশ উদ্ধারের পর বৃদ্ধার ছোট ছেলের অভিযোগ তার মা আত্মহত্যা করেননি; কিন্তু স্বামী বলছেন, তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন। তাই আমরা সন্দেহ দূর করতে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি সঠিকভাবে জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় একটি ইউডি মামলা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে