রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

|

চৈত্র ২৮ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

টাকা না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজনকে টুকরো টুকরো করে ইয়াছিন!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২৩:১০, ১১ এপ্রিল ২০২৫

টাকা না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ তিনজনকে টুকরো টুকরো করে ইয়াছিন!

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করে মাটি চাপা দিয়ে গুম করা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে মাটির নিচ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় অর্ধগলিত লাশগুলো উদ্ধার করা হয়।

এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ইয়াছিন আলী নামে একজনকে ওই এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশ। যৌতুক ও মাদক ব্যবসার জন্য টাকা না দেয়ায় ইয়াছিন নিজের স্ত্রী, সন্তান ও স্ত্রীর বড় বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর মরদেহ টুকরো টুকরো করে মাটির নিচে চাপা দিয়ে গুম করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পুলিশ ও এলাকাবাসী।

মহল্লায় মানুষের চলাচলের রাস্তার পাশে মাটি খুঁড়তেই একে একে বেরিয়ে এলো দুই নারী ও এক শিশুর শরীরের খণ্ড বিখণ্ড অংশ। অর্ধগলিত পচা লাশগুলোর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। 

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জে মিজমিজি পশ্চিমপাড়া বড়বাড়ি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেনের বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে রাস্তার পাশ থেকে পচা লাশের দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা ট্রিপল লাইনে কল দিয়ে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে দুপুর একটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে রাস্তার পাশে মাটি খুঁড়তেই একে একে বেরিয়ে আসে লামিয়া আক্তার, তার চার বছর বয়সের শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ হাবিব ও লামিয়ার প্রতিবন্ধী বড় বোন স্বপ্না আক্তারের শরীরের খণ্ড বিখণ্ড অংশ। মাত্র এক ফুট মাটির নিচে তিনজনের মরদেহের খণ্ডিত অংশগুলো একটি বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল। 

তিনজনের মরদেহের খণ্ডিত অংশগুলো উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য সেগুলো সদরের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।

এলাকাবাসী জানান, মজমিজি পশ্চিমপাড়া বড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশা চালক ইয়াছিনের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে লামিয়া স্বামী সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ির কাছাকাছি একই এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। বাবা আব্দুস সামাদের মৃত্যুর পর থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী বড় বোন স্বপ্না আক্তার লামিয়ার সঙ্গেই থাকতেন। স্বামী ইয়াছিন বেশ কিছুদিন ধরে মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ায় লামিয়া পোশাক কারখানায় কাজ করে সংসারের খরচ চালাতেন। ইয়াছিন কাজ কর্ম না করে নেশা করতো আর নেশার টাকার জন্য লামিয়াকে মারধর করতো। এ নিয়ে পরিবারটিতে অশান্তি বিরাজ করছিল।

তবে স্বামী ইয়াছিন মাদকের টাকার জন্য লামিয়াকে নানাভাবে নির্যাতনসহ যৌতুক হিসেবে লামিয়ার বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করেছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। সম্প্রতি ইয়াছিন আরও টাকা দাবি করে না পাওয়ায় সেই ক্ষোভ থেকে স্ত্রী লামিয়া, লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না ও নিজের একমাত্র শিশু সন্তানকে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো করে মাটির নিচে গুম করে বলে অভিযোগ করেন লামিয়ার কাছে আত্মীয়-স্বজনরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, ‘ইয়াছিন মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা করে তা এলাকার সবাই জানে। সম্প্রতি ইয়াছিন একটি মামলায় বেশ কিছুদিন কারাগারে ছিল। ঈদের ছুটির আগে পর তার মা তাকে জামিনে মুক্ত করে আনেন। ঈদের ছুটিতে এলাকার অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে যান। লামিয়ার ভাড়া বাসার অন্যান্য ভাড়াটিয়াও গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গেছেন। মহল্লা ও বাসা নিরিবিলি হয়ে পড়ায় এ সুযোগে ইয়াছিন নিজ বাসাতেই তার স্ত্রী লামিয়া, শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ হাবিব ও লামিয়ার প্রতিবন্ধী বড় বোন স্বপ্নাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। পরে লাশগুলো টুকরো টুকরো করে বাসায় নিকটবর্তী রাস্তার পাশে মাটির নীচে পুঁতে রাখে।’

স্থানীয় মসজিদের খতিব জানান, শুক্রবার বেলা এগারোটার দিকে রাস্তার পাশে আমির হোসেনের বাড়ির দেয়াল ঘেঁষে রাস্তার পাশে পঁচা দূর্গন্ধ বের হতে থাকলে একটি কুকুর সেখানে মাটি খুঁড়তে শুরু করে। এসময় মেহেদি রাঙানো একটি খন্ডিত হার বের হয়ে আসে। এ দৃশ্য দেখে স্থানীয়রা ট্রপল নাইনে কল দয়ে বিষয়টি জানালে থানা পুলিশ এসে মাটি খুঁড়ে দুই নারী ও এক শিশুর টুকরো টুকরো অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। তিনটি লাশেরই মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন ছিল।

চাঞ্চল্যকর এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনার পর থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি পুলিশ, র‍্যাব ও পিবিআই সহ জেলা আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে। এ বিষয়ে পৃথকভাবে তদন্ত কাজ করছেন তারা।

বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) তাসমিন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘লামিয়ার পরিবারের অভিযোগ ইয়াছিনই এ হত্যাকাণ্ড করেছে। তার পক্ষেই এটি সম্ভব। তাই ইয়াছিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আমরা গ্রেফতার করেছি। প্রাথমিক তদন্ত ও আটককৃত ইয়াছিন আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে ইয়াছিনই এই তিন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আটককৃত ইয়াছিনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’

এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা।