
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে লামিয়া আক্তার (২২) ও স্বপ্না আক্তার (৩৪) নামে দুই নারী ও লামিয়ার শিশু সন্তান আব্দুল্লাহর (৪) খন্ড বিখন্ড বীভৎস লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিহত লামিয়ার বড় বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে নিহত লামিয়ার স্বামী মো. ইয়াছিনসহ তিনজনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় গ্রেপ্তারকৃত মো. ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হলে আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শনিবার বিকেল ৫টায় রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল কাইউম খান।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার বেলা ৩টায় মিজমিজি পশ্চিমপাড়া বড়বাড়ি পুকুরপাড় এলাকায় মাটির নিচে পুতে রাখা দুই নারী লামিয়া আক্তার ও স্বপ্না আক্তার ও লামিয়ার শিশুপুত্রের খন্ড বিখন্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দুই নারী সম্পর্কে তারা আপন বোন। পারবারিক কলহের জেরেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। লাশ উদ্ধারের সময় নিহত লামিয়ার স্বামী মো. ইয়াসিন (২৪) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে শুক্রবার গভীর রাতে নিহত লামিয়া আক্তার ও স্বপ্না আক্তারের বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে তিনজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলো- নিহত লামিয়ার স্বামী মো. ইয়াসিন (২৪), শ্বশুর মোঃ দুলাল (৫০) ও তার ননদ মোসাঃ শিমু (২৭)। মামলার এজাহারেও পারিবারিক কলহের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল কাইউম খান বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে দুই নারী ও এক শিশুকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি মো. ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেলায়েত হোসেনের আদালতে ত্রিপল মার্ডারের ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি মো. ইয়াসিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশদিনের রিমান্ড আবেদন করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ইয়াসিনের সাথে পাঁচ বছর পূর্বে লামিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর হতেই লামিয়ার শ্বশুর ও ননদ প্রায় সময় তাকে মারধর করতো। বিয়ের পরে লামিয়া-ইয়াসিন দম্পতির একটি পুত্র সন্তান হয়। ইয়াসিন মূলত মাদকাসক্ত। বিয়ের পর থেকে স্ত্রী-সন্তানের কোন ভরণপোষণ দিতো না সে। বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া ও মারামারি হতো বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ কারনে লামিয়া তার ছেলে আব্দুল্লাহ ও বড় বোন স্বপ্না আক্তারকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া বড়বাড়ি পুকুরপাড় এলাকায় মোক্তার হোসেনের বাড়ীতে আলাদা ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। নিহত লামিয়া সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকার মুজিব ফ্যাশন গার্মেন্টসে হেলপার হিসাবে চাকরি করতো। এদিকে ইয়াসিন প্রায় সময় সেই বাড়ীতে গিয়ে লামিয়ার কাছে টাকা দাবী করত বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। দাবীকৃত টাকা না দিলে ইয়াসিন শারীরিক নির্যাতনসহ খুন জখম করার হুমকি প্রদান করতো।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয় গত ৭ এপ্রিল দুপুরে মুনমুন আক্তার ও তার স্বামী লামিয়াদের ভাড়াটিয়া বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নিয়ে আসে। তাদের বাসা থেকে আসার পর থেকে লামিয়ার ব্যাবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাদের খোঁজ নেয়ার জন্য সেই বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি। স্বজনসহ বিভিন্নস্থানে খোজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি তাদের। পরে শুক্রবার দুপুরে লামিয়াদের ভাড়া বাড়ীর সামনে রাস্তার পাশ থেকে গর্ত করে পুতে রাখা তাদের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। লামিয়া আক্তার ও স্বপ্না আক্তারের মাথা হতে দেহ ও দুই পা দ্বিখন্ডিত কাটা, ছোট বোন লামিয়া আক্তারের মাথা হতে দেহ দ্বিখন্ডিত, শিশু আব্দুল্লাহর গলায় কালো সুতা দিয়ে পেঁচানো লাশ উদ্ধার করা হয়।