
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ঐতিহাসিক গোয়ালদী শাহী মসজিদ অযত্ন-অবহেলায় হারিয়ে ফেলছে নিজ ঐতিহ্য। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে থাকা সত্ত্বেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পাঁচ শতাধিক বছরের পুরানো এই স্থাপনাটি ক্রমশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সংস্কৃতি কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
সোনারগাঁ উপজেলার গোয়ালদী এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে ‘গায়েবি মসজিদ’ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে, এটি ১৫১৯ সালে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর শাসনামলে মোল্লা হিজবার আকবর খান নির্মাণ করেন। প্রাচীন বাংলার মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে এটি সমাদৃত।
চুন সুড়কি ও লাল ইটের মিশ্রণে নির্মিত এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদে খোদাইকৃত আরবি হরফ ও ইসলামি নকশা দেখা যায়। মোঘল সম্রাট ঈশা খাঁ’র রাজধানী পানাম নগরের নিকটে অবস্থিত এই মসজিদের ভেতরে মেহরাব ও মিম্বরের শৈল্পিক কারুকাজ এখনো দর্শকদের মুগ্ধ করে।
কিন্তু কালের বিবর্তনে মসজিদের মূল কাঠামোর বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেয়াল থেকে চুন-সুড়কি খসে পড়ছে, শ্যাওলা ও আগাছার কারণে এর সৌন্দর্য মলিন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মূল গম্বুজের কিছু অংশ ভেঙে গেছে, যা স্থানীয়দের উদ্যোগে মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
স্বাধীনতার পর মসজিদটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয় এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে এখানে কোনো তত্ত্বাবধায়ক নেই। মূল ফটক উন্মুক্ত থাকায় এটি এখন অরক্ষিত। স্থানীরা জানান, অতীতে মসজিদের মূল্যবান কালো মার্বেল পাথর ও সীমানা পিলার লুটপাট হয়েছে। বর্তমানে দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে, গম্বুজের পশ্চিম স্তম্ভের উপরের বুরুজ ধসে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংস্কৃতি কর্মীরা মসজিদটির জরুরি সংস্কারের দাবি তুলেছেন। ‘সোনারগাঁয়ের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণ কমিটি’র আহ্বায়ক শাহেদ কায়েস বলেন, ‘সংস্কারের নামে শুধু দেয়াল রং করা হয়েছে, কিন্তু মূল অবকাঠামো ঝুঁকিতে রয়েছে। গম্বুজের পেছনের স্তম্ভ ধসে পড়েছে, যা দ্রুত মেরামত করা দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘মূল মসজিদে থাকা মূল্যবান কষ্টিপাথর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সহকারী কাস্টোডিয়ান (পানাম নগর) মো. সিয়াম চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর মসজিদের ভেতরের মূল কাঠামোর কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট করা হয়েছে। সম্প্রতি সীমানা প্রাচীর রং করা হয়েছে। আরও সংস্কারের প্রয়োজন আছে কিনা, তা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্ধারণ করবেন।’
গোয়ালদী শাহী মসজিদ শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থাপত্যশিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। যথাযথ সংরক্ষণের মাধ্যমে এই মূল্যবান স্থাপত্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখা জরুরি। স্থানীয়রা সরকারের কাছে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।