রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

|

ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জে নাশকতার ২২ মামলা, গ্রেপ্তার ৪৩৬

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৩, ২৭ জুলাই ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে নাশকতার ২২ মামলা, গ্রেপ্তার ৪৩৬

গ্রেপ্তার

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় দায়ের হওয়া নাশকতার মামলায় ৫ দিনে পুলিশ বিএনপি’র নেতাকর্মীসহ ৪৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসরাফিল প্রধানসহ ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপি’র নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ নিরীহ মানুষ, শিক্ষার্থী, অটোচালক, রিকশাচালক,  হোটেল কর্মচারী, গার্মেন্টস শ্রমিকও রয়েছে। আবার একজনকে না পেয়ে পরিবারের অন্যজনকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা ঘটেছে। 

ওদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে আরও ৮টি মামলা হয়েছে। এতে জেলার ৭টি থানায় মামলার সংখ্যা ২২। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও ফায়ার সার্ভিসের দুই মামলা এবং ২০টি মামলা করেছে পুলিশ। নাশকতার অভিযোগে পুলিশের মামলাগুলোতে নারায়ণগঞ্জ জেলা, মহানগর, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এইচএসসি পরীক্ষার্থী গ্রেপ্তার: সিদ্ধিরগঞ্জ ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদির জিলানী হীরাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তাকে না পেয়ে পুলিশ তার ভাই এইচএসসি পরীক্ষার্থী আবু রায়হান (১৮)কে গ্রেপ্তার করে। ২২শে জুলাই মধ্যরাতে সিদ্ধিরগঞ্জের ৪নং ওয়ার্ডের আটিগ্রাম এলাকার নিজ বাসা  থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আবু রায়হান ওই এলাকার মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে।

এবার তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। তার বড় ভাই আব্দুল কাদির হীরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি।

রায়হানের পরিবার জানায়, পরদিন সকালে আমরা পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিয়ে থানায় গেলে আমাদের থানার ভেতর কোনোভাবেই প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পরে আবু রায়হানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না দিয়ে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠিয়ে দেয়। ২৪শে জুলাই আদালতে আবু রায়হানের জামিনের জন্য আবেদন করা হলে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। আগামী ২৯শে জুলাই রায়হানের পরবর্তী পরীক্ষা। এর আগে জামিন না দিলে ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। এদিকে ২৩শে জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদির হীরাকে বন্দর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
২১শে জুলাই রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মোস্তফা কামালকে না পেয়ে তার ৩ ছেলে মাহফুজ, ফয়সাল ও সিয়ামকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। মিজমিজি পশ্চিমপাড়া হাইস্কুলের সন্নিকটের বাড়িতে এ সময় তারা রাতের খাবার খাচ্ছিল। পরদিন তাদের নাশককতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ২২শে জুলাই ভোররাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি’র আরেক সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুনকে না পেয়ে তার প্রকৌশলী ছেলে আকাশ ও আরজুকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে আকাশ বিজিএম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করে বের হয় এবং আরজু স্থপতি (আর্কিটেক্ট) বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যায়নরত। বাসার তালা ভেঙে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন। পরে তাদের নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

পুলিশের অভিযোগ: পুলিশ জানায়, কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে আসামিরা চাষাঢ়া মোড়, ২নং রেলগেট, সদর থানা, ফতুল্লা থানার জালকুড়ি, ভূঁইগড়, সাইনবোর্ড, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমরাইল, চিটাগাং রোড, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মোড়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ, সরকারি অফিস সার্ভিসের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও পুলিশ পিবিআইএ অফিসেও তারা হামলা করে। এ ছাড়াও কাঁচপুর মেঘনা টোল প্লাজা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। সেইসঙ্গে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড এসবি গার্মেন্ট, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, সাইনবোর্ড হাইওয়ে পুলিশ বক্স, বন্দর ধামগড় ফাঁড়ি, জালকুড়ি শীতল বাস ডিপো পুড়িয়ে দেয়। শিমরাইল ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মোড়ে হাইওয়ে পুলিশ বক্সে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। একপর্যায়ে গত ২১শে জুলাই পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, সেনাবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে নাশকতাকারীদের অপসারণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ২৫শে জুলাই দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় ১৪টি নাশকতার মামলা করা হয় এবং রাতে চারটি থানায় নতুন করে আরও ৮টি মামলা করা হয়।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম-অপারেশন) চাইলাউ মারমা জানান, ১৪ মামলার পর নতুন করে আরও ৮টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৩টি, ফতুল্লা থানায় ২টি, বন্দর থানায় ১টি ও সদর থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আরও ৬২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৫ দিনে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৪৩৬ জন। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।