শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

|

পৌষ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

রেড জোনে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৫:১১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৬:০০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রেড জোনে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি!

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে এখন দল থেকে পদচ্যুত হওয়ার আতংকে ভুগছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, যেকোন সময় জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়া হতে পারে। এছাড়াও বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতারা। 

৫ আগষ্টের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরজুড়ে ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে কিছু অভিযোগ এসেছে। এসকল ঘটনায় বিএনপি ও এর অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম ঘুরেফিরে আসছে। 

ইতোমধ্যে ছাগলচুরি ও মূলদলের নেতাদের ওপর হামলা, দলীয় কার্যালয় ভাংচুরের জেরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের ছাত্রদলের সকল ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্র। 

৫ আগষ্টের পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অবস্থিত শিল্পাঞ্চল বিসিক, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল গুলোতে কিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাবসায়ীরা এসকল ব্যাপারে দলের হাই কমান্ডের সহায়তা চেয়েছেন। 

চাঁদাবাজির ভয়াবহতা ঠিক কত তা টের পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স ও বিকেএমইএ'র শীর্ষ নেতাদের কথায়। জেলার শীর্ষ এসকল ব্যাবসায়ী সংগঠনের অফিস থেকেও চাঁদা আদায়ের কথা অসহায় ভাবে জানান তারা। 

এক সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদ বলেন, কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন কোন ভাবেই চাঁদাবাজি করা যাবেনা, দখল করা যাবেনা। তারা বহু চেষ্টা করছে৷ কিন্তু স্থানীয় নেতারা মঞ্চে উঠে বলছে কোনভাবে চাঁদা দিবেন না। আমাদের বলবেন আমরা ব্যবস্থা নেব। এসব রাজনৈতিক বক্তব্য শেষ করেই মঞ্চ থেকে নেমেই ফোন করে বলে ভাই জুটটা দিলেন না? এমন শত শত ফোন আমি পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন গত কয়েকদিন কীভাবে চাঁদাবাজি হয়েছে। কীভাবে হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। আমার চেম্বারও আক্রান্ত। দশলাখ টাকার দাবী ছিল, তিন লাখ টাকায় মিটিয়েছি। সাত লক্ষ টাকার জন্য চাপ আছে। আমাদের প্রানপ্রিয় প্রতিষ্ঠান বিকেএমইএ'ও পাঁচ লক্ষ চাঁদা দিয়েছে বাধ্য হয়ে। 

এসময় চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পাশাপাশি দলীয় প্রধানদের কাছে প্রমানসহ অভিযোগ দেয়ার কথাও জানান ব্যাবসায়ী নেতারা। পাশাপাশি সেসময় অনতিবিলম্বে আদায়কৃত চাঁদার টাকা ফেরত দিতে আল্টিমেটাম দেন ব্যাবসায়ী নেতারা।

জানা গেছে, দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে কেন্দ্রে নানা অভিযোগ করেছেন ব্যাবসায়ী নেতারা। চাঁদা আদায়ের পর ব্যাবসায়ী নেতাদের দলীয় প্রধানের কাছে বিচার দেয়ার কথা শুনে অনেকেই চাঁদার টাকা ফেরত দিয়েছেন বলেও জানা গেছে। 

এদিকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ব্যাবসায়ী নেতাদের করা অভিযোগ বিএনপি আমলে নিয়েছে। এসকল ঘটনায় কেন্দ্রে পাঠানো অভিযোগ গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নূন্যতম সংশ্লিষ্টতা পেলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এসকল ঘটনায় যেকোন মুহুর্তে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এসকল কমিটির আংশিক বা পুরো কমিটি বিলুপ্ত করা হতে পারে বলে জানা গেছে। 

এদিকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের তকমা থেকে নিজেদের বাঁচাতে মরিয়া বিএনপি। সাম্প্রতিক সময়ে জেলার শীর্ষ বিএনপি নেতাদের সাথে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে দেন তারেক রহমান। এসকল ঘটনায় জড়িতদের কোন ক্রমেই বরদাস্ত করা হবে না এবং উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানান তিনি। 

ইতিমধ্যে এসকল অপকর্মে লিপ্ত ব্যাক্তিদের অঞ্চলভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করছে বিএনপি। পর্যায়ক্রমে এসকল তালিকা তদন্ত করে তাদের বহিষ্কার করা হবে বলে জানা গেছে।

পাশাপাশি বিগত দিনে রাজপথে সক্রিয় ও যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নেই তাদের দলের নেতৃত্বে আনার ইঙ্গিত দিয়েছে দল।