বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

|

অগ্রাহায়ণ ৬ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

আশির দশকের বেকার শামীম ওসমান হাজার কোটি টাকার মালিক!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২১ নভেম্বর ২০২৪

আশির দশকের বেকার শামীম ওসমান হাজার কোটি টাকার মালিক!

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জে আশির দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি হয় ওসমান পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের। তোলারাম কলেজ থেকে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে আলোচনায় আসেন শামীম ওসমান। তৈরি করেন বিশাল কর্মী বাহিনী। সেই সময় থেকেই আর্থিক সংকটে ভুগেছেন শামীম ওসমান ও তার পরিবার। বিগত সরকারের আমলে প্রায়ই নিজের বক্তৃতায় শামীম ওসমান নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন বহুবার। 

১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মত আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামীম ওসমান। ২০০১ সালে ক্ষমতা হারায় আওয়ামী লীগ, নির্বাচনে হেরে দেশ ছেড়ে চলে যান শামীম ওসমান। দীর্ঘদিন বিদেশে আত্মগোপনে থাকার পর ২০০৯ সালে দেশে ফেরেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ১৫ বছর বাদ দিলে বাকি রাজনৈতিক জীবনের পুরেটাই ছিল উত্থান পতনের। ২০০৯ সালে যখন শামীম ওসমান দেশে ফেরেন তখন নিজের বাড়িটি ছাড়া কোন সম্পত্তি ছিলনা শামীম ওসমানের। তবুও আশির দশকের বেকার এই শামীম ওসমান ২০২৪ সালে সপরিবারে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছিলেন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক। দেশের বাইরে বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছেন বাড়িসহ হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। 

২০০৯ সালে দেশে ফেরার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন শামীম ওসমান। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামেন শামীম ওসমান। নির্বাচনে শামীম ওসমান পরাজিত হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ পরিনত হয় গুম-খুনের শহরে। 

রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও নির্বাচনে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে যাওয়ায় শহরে আশিক, চঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জে গুমের পরে খুন হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সাত খুন ছিল ব্যাপক আলোচিত। এসকল হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নাম এসেছে ওসমান পরিবারের সদস্যদের।

২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এসকল হত্যা ও গুমের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জজুড়ে শামীম ওসমান এক মূর্তিমান আতংক হয়ে দাঁড়ান। শহরের পরিবহন সেক্টর থেকে শুরু করে গার্মেন্টস ব্যাবসা, ফুটপাতের হকারদের থেকে চাঁদাবাজিসহ সকল সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় শামীম ওসমান ও তার সহযোগীদের হাতে। 

শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা শাহ্ নিজাম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এহসানুল হক নিপু, সিদ্ধিরগঞ্জের যুবলীগ নেতা কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবুসহ বেশ কয়েকজন মিলে শামীম ওসমানের এই বিশাল অপরাধ সম্রাজ্য পরিচালনা করতেন।

২০১৪ সালের নির্বাচনে হলফনামায় শামীম ওসমান উল্লেখ করেন বাড়ি, গাড়ি ও সম্পত্তি ছাড়া তিনি সেসময় মাত্র সাড়ে চার কোটি টাকার মালিক। এদিকে ২০২৪ সালে নির্বাচনী হলফনামায় শামীম ওসমান জানান, তার নামে মাত্র আট কোটি টাকা ও গাবতলিতে দশ শতাংশ জায়গা, পূর্বাচলে দশ কাঠা জমি, মাসদাইর ও চাষাঢ়ার বাড়ি, সোনারগাঁয়ে ১২৩ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে। তবে হলফনামায় রাজধানীর উত্তরা ও গুলশানের বাড়ি ও বসুন্ধরার ফ্ল্যাটসহ নামে বেনামে থাকা আরো সম্পত্তির কথা তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি। 

এছাড়াও শামীম ওসমানের নামে এগারোটি কার্গো ও ট্যাংকার জাহাজ রয়েছে। দেশের বাইরে শামীম ওসমানের পরিবারের নামে দুবাই, কানাডা ও আমেরিকা, তুরষ্ক, সুইজারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে বাড়ির ব্যাবসা রয়েছে। বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকত্ব রয়েছে শামীম ওসমান ও তার পরিবারে।

এছাড়াও তিনি জ্বালানি তেলের প্রতিষ্ঠান জেডএন কর্পোরেশন, জেডএন শিপিং, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাইশা এন্ডারপ্রাইজ, উইজডম নিটিং মিল ও খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিমিটেডের মালিক। এছাড়াও শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন দেশে বাড়ি ও সম্পত্তি রয়েছে। 

মূলত নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি, ফতুল্লার বিসিক ও সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, গার্মেন্টস থেকে চাঁদাবাজি, ভূমি দখল করেই বিগত ১৬ বছরে দেশে ও বিদেশে এসকল ব্যাবসা ও বিপুল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন।