ফাইল ছবি
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরবর্তীতে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পুরো সময়জুড়েই অগ্নিগর্ভ অবস্থায় ছিল নারায়ণগঞ্জ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর পাশাপাশি ছাত্র জনতার সাথে সংঘাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও জেলা তৎকালীন সংসদ সদস্যরা মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ নানা রকমের চাপের কারণে সেসকল তথ্য প্রকাশ করা না গেলেও গত পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে একে ভয়াবহ সব ঘটনা সামনে আসতে থাকে।
নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন দমন করতে ফিল্মী স্টাইলে মাঠে নেমেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি একেএম শামীম ওসমান। অটোমেটিক অস্ত্র নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি চালান তিনি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এদিন মাঠে ছিলেন শামীম ওসমান।
পাঁচ আগষ্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান শামীম ওসমান ও ওসমান পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। বেশ কয়েকদিন আত্মগোপনে থাকার পর জানা যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান শামীম ওসমান। পরবর্তীতে ভারত থেকে দুবাই যান তিনি। বর্তমানে দুবাইয়ের আজমান শহরে শামীম ওসমান পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত জনতার ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ওসমান পরিবারের আরেক সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর থেকে তিনি দেশেই আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাতের বিরুদ্ধে। আন্দোলন দমন করতে হাসনাতের সশস্ত্র বাহিনী ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছাত্র জনতার ওপর হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। পাঁচ আগষ্টের পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন কায়সার ও তার পরিবার।
নারায়ণগঞ্জে ছাত্র জনতার আন্দোলনে আড়াইহাজারে সশস্ত্র বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে আলোচনায় ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু। তবে পাঁচ আগষ্টের আগেই সরকারের পতন ঘটতে পারে এমন আশংকা থেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান বাবু। বর্তমানে তিনি মালয়শিয়ায় আছেন বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার ওপর হামলা চালিয়েছিল রূপগঞ্জের (নারায়ণগঞ্জ-১) সাবেক এমপি ও মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনী। পাঁচ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যান গাজী। কথিত আছে স্ত্রীকে রেখেই পালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে তিনি একাধিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। একাধিকবার রিমান্ডে নিয়ে তাকে এসব মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ও ডিবি।
গত ২৫ আগষ্ট ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে গাজীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সংগঠিত বেশ কয়েকটি মামলায় আদালতে তার বিচার চলছে।