প্রতীকী ছবি
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের মাঝে বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচনী ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট করার বিষয়ে আলোচনা বেশ জোরে-শোরেই হচ্ছে। তবে এ নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
এদের মধ্যে রয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও পর্যবেক্ষকরা।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষ বিশিষ্ট। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় ৩০০ আসনের এই কক্ষের সদস্যদের নিয়েই এতোদিন গঠিত হয়েছে সরকার। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা সরকারের ইচ্ছারই কেবল প্রতিফলন হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই কক্ষের সংসদ হলে উচ্চ কক্ষের অনুমোদনের ভিত্তিতেই কেবল বাস্তবায়ন হবে নিম্নকক্ষের সিদ্ধান্ত। এতে জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিম্নকক্ষে এলেও প্রতিষ্ঠা পাবে ক্ষমতায় ভারসাম্য। ফলে জনগণের ওপর দলীয় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের শাসন অবসানের পর ভবিষ্যতে যেন কোনো দল সেই সুযোগ না পায় মূলত সেই দৃষ্টি ভঙ্গি থেকেই দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের আলোচনা হালে পানি পেয়েছে।
অনেকেই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশনকে এই পদ্ধতি আনার সুপারিশ করতে প্রস্তাবনা দিচ্ছেন। তবে এমন প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের সংশোধন দরকার বলে মনে করছে ওই সংস্কার কমিশন। তাদের মতে সংবিধান সংস্কার কমিশনকে এই উদ্যোগ নিতে হবে। কেননা, দুই কক্ষের সংসদীয় পদ্ধতি চালু করতে হলে সংবিধানে সেই বিধান আনতে হবে। আবার সংবিধান সংশোধন করতে হলেও নিতে হবে দলগুলোর মতামত।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই। এই সিস্টেমই কার্যকর হতে পারে। নতুন কোনো সিস্টেম দরকার আছে বলে মনে করি না।
১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনের সময়কার এই সিইসি বলেন, আমাদের যে সিস্টেম আছে, যেটা মানুষের কাছে পরীক্ষিত। এই সিস্টেমই কার্যকর করে তোলা দরকার। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সংসদ কয় কক্ষের হবে এটা দলগুলোর ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, সংসদীয় পদ্ধতি থাকবে। আমেরিকান ওই দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সিস্টেম আনার দরকার নেই। নির্বাচনকে সরলীকরণ করতে হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য যদি বন্ধ করা না যায় সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। কেননা, মনোনয়নপত্র বাণিজ্যটাই নির্বাচনটাকে ট্রেডিংয়ে এনেছে। ২০ কোটি টাকা দিয়ে কিনবো, ১০ কোটি টাকা ছড়াবো। পাঁচ বছর থাকলে দুইশ, আড়াইশ কোটি টাকা লাভ করবো, সোজা হিসাব। এমপি চরিত্র নষ্ট হচ্ছে এইজন্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ও ঢাকা ইন্টারন্যাশল ইউনিভার্সিটিরি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারি বলেন, পলিটিকস নিডস ইমিডিয়েট বেনিফিট। সবাই তাৎক্ষণিক সুবিধা চায়। বর্তমান সরকারের উচিত আগে দ্রব্যমূল্যে হাত দেওয়া। তাদের দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ নির্বাচন দেওয়া। সেটাই করা উচিত। সংবিধান সংশোধন করতে হলে সবগুলো দলের না হলেও অন্তত বড় দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন। ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে করা যেতে পারে।
মানবাধিকার সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ড. মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠিত হলে আইন প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সংসদের দুটি কক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যা নির্বাচন অনুষ্ঠানেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। এই ব্যবস্থা চালুর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আমরা এই সুপারিশ সংস্কার কমিশনকেও দিয়েছি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক কমিশন প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনেক ধরনের মতামত আছে। অনেক রকম গুরুত্বপূর্ণ, অভিনব, সৃজনশীল প্রস্তাব রয়েছে। এক্ষেত্রে অনেক মতামত বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংস্কার কমিশনেও এমন প্রস্তাব এলে আমরা সংশ্লিষ্ট কমিশনের সঙ্গেও বসবো। সব পর্যালোচনা করেই সরকারকে সুপারিশ দেবো। কিছু সুপারিশ নতুন কমিশন বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলো বাস্তবায়ন করবে।