ফাইল ছবি
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে মত প্রকাশ করছেন অনেকেই।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। তবে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে আছে। কারণ অভ্যুত্থানের অনেক আগেই দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাব প্রথম উত্থাপন করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন বাংলাদেশে দ্বিকক্ষ সংসদের পক্ষে দলটির অবস্থান আরও স্পষ্ট।
গত ১৩ জুলাই রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা রূপরেখা প্রকাশ করে বিএনপি। এই রূপরেখার পঞ্চম দফায় ‘উচ্চ-কক্ষবিশিষ্ট’ আইনসভার কথা বলা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওই রূপরেখার ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে ৫ আগস্ট সরকার পতনের মাধ্যমে। সেই সংস্কার আন্দোলন এখন রাষ্ট্র সংস্কারে রূপ নিয়েছে।
রাষ্ট্র সংস্কার এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধির কাছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের দায় নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলো তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে হঠাৎ আলোচনায় উঠে এসেছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিষয়টি। দ্বিকক্ষ আইনসভা বা সংসদ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে চলছে নানা আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা।
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা চাওয়া দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনীতিক দল বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন এবং দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট গঠন করবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ছিল শেখ হাসিনার মত দৈত্য, আরেকটা দৈত্য যাতে সৃষ্টি না হয়, এজন্য ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে সব ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে, দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে অন্যতম দ্বিকক্ষ সংসদ। আর এই প্রস্তাব সর্বপ্রথম বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়। বিএনপি সব সময় বিশ্বাস করে জনগণ সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। আর এ কারণেই বিএনপি দ্বিকক্ষ পার্লামেন্টের বাস্তবায়ন চায়।
এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধান সংশোধনের জন্য আগে দরকার একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠাতা না হলে সংস্কার গ্রহণযোগ্য হবে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এম. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা এখনও পর্যন্ত বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে রয়েছি। এ কারণে ৯৩ অনুচ্ছেদের দিকে তাকালে এসব প্রস্তাবনা এই সরকারের জায়গা থেকে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারবে কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। এই অনুচ্ছেদে বলা আছে, সব অধ্যাদেশ জারি করা যাবে, শুধু সংবিধান সংশোধন ছাড়া।
রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে দ্বিকক্ষ আইনসভা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা, চুল চেরা বিশ্লেষণ।
বলা হচ্ছে, দ্বিকক্ষ সংসদ থাকবে। উচ্চকক্ষের নাম হবে জাতীয় পরিষদ, নিম্নকক্ষ হবে জাতীয় সংসদ। সংসদ নির্বাচন হবে প্রচলিত পদ্ধতিতে ৩০০ আসনে। জাতীয় পরিষদের ২০০ আসন হবে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। আইনসভার মেয়াদ হবে ৪ বছর। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কেউ দুইবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না।