ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে শহরকেন্দ্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের শাসনামলের পুরোটা সময়জুড়েই রাজপথে অকুতোভয় সৈনিকের মত লড়াই সংগ্রাম করে গেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপি নেতা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশ কয়েকবার দল বদলের প্রস্তাবও এসেছিল খোরশেদের কাছে। মামলা, হামলায় জর্জরিত খোরশেদের কাছে প্রস্তাব ছিল বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলে মামলা তুলে নেয়া হবে। এছাড়াও বিপুল অংকের টাকা, ব্যাবসা বানিজ্যের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল খোরশেদকে। কিন্তু দলের প্রতি অনুগত থেকে নীরবে সকল অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে গেছেন।
আন্দোলন সংগ্রামের উত্তাল সময়গুলোতে নারায়ণগঞ্জ শহরে আন্দোলনের জন্য খোরশেদের ওপরেই ভরসা করতে হত বিএনপিকে। হরতাল অবরোধের মত কর্মসূচিতে সক্রিয় এই নেতার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় রাজনৈতিক মামলার সংখ্যা ৭১টি। গত ১৭ বছর যাবৎ এসকল মামলায় জেল খাটছেন ও কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন খোরশেদ। শত নির্যাতনের পরেও দলের জন্য রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন খোরশেদ। দীর্ঘদিন যাবৎ দলীয় কোন পদবী না থাকলেও দলের প্রতি খোরশেদের আনুগত্য এতটুকুও কমেনি।
২০২৩ সালের শেষের দিকে বিএনপির বহিস্কৃত নেতা ও খোরশেদের বড় ভাই তৈমুর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিলে তার বিরুদ্ধে চলে যান খোরশেদ। তৈমূরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে আবারও আজীবন বিএনপির কর্মী হয়ে থাকার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন খোরশেদ।
শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। দলের ব্যানারে নানা সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন খোরশেদ। সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে দলের প্রচার ও প্রসার ঘটান খোরশেদ। ২০১৩ সাল থেকে দলের সকল হরতাল অবরোধের কর্মসূচীতে নগরীর মূল সড়কে মিছিল করেছেন খোরশেদ। এসময় সকল কর্মসূচীতে পুলিশ বাধা দিলে ও লাঠিচার্জ করলেও পিছপা হননি তিনি। এর মধ্যে গুলিও হয়েছে কয়েকটি মিছিলে। এসব কর্মসূচীতে খোরশেদের পাশে থেকে মহানগর যুবদল নেতা রানা মুজিব, জুলহাসসহ শতাধিক নেতাকর্মী বিভিন্ন থানার রাজনৈতিক মামলার শিকার হন। এসব মামলায় এখনো খোরশেদসহ সকলে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন।
২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি কাউন্সিলর নির্বাচিত হবার পর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ ফিরে গ্রেফতার হন খোরশেদ। বিএনপি ঘোষিত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে বিকেলে মহানগর যুবদল নগরীর ডিআইটি এলাকা থেকে মিছিল বের করলে পুলিশ প্রথমে মিছিলে বাধা দেয়। পরে যুবদল নেতা কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ সময় কাউন্সিলর খোরশেদসহ চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণের পর সারাদেশের মধ্যে প্রথম রায়ের সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা যুবদল খোরশেদের নির্দেশে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময়ও বার বার আওয়ামীলীগ থেকে দলে যোগ দিতে ও নানা পদের প্রলোভন দেয়া হলেও সেটি অগ্রাহ্য করে দেন খোরশেদ। তিনি আমৃত্যু পদ পদবি না থাকলেও বিএনপি ও জিয়া পরিবারের সাথে থাকবেন বলে জানিয়ে দেন।
২০২২ সালে আন্দোলন সংগ্রামের উত্তপ্ত সময়ে রাজপথে সক্রিয় থাকায় সেসয়ম প্রায় তিনমাস কারাবন্দী থাকতে হয় খেরশেদকে। কারাগারে থেকেও সেসময় মহানগর যুবদলের কমিটি থেকে বাদ পড়েন খোরশেদ। পরবর্তীতে মহানগর বিএনপিতেও রাখা হয়নি এই নেতাকে। তবুও দলের প্রতি অনুগত থেকে কাজ করে গেছেন খোরশেদ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেনের মধ্যে পর পর ৪ বার টানা সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় জনপ্রতিনিধি খোরশেদ। সর্বশেষ নির্বাচনে খোরশেদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা আওয়ামীলীগসহ সকল প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা এ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বিএনপির হরতাল অবরোধের নাশকতার মামলা থাকায় তার কাউন্সিলরশীপ বাতিল করা হয় ২০১৫ সালে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে রিট করে কাউন্সিলরশীপ ফিরে পান তিনি।
খোরশেদের এলাকা ১৩ নং ওয়ার্ড অবস্থিত চাষাঢ়া নগরীর প্রাণকেন্দ্র। এই ওয়ার্ডে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার যেখানে আন্দোলন সংগ্রামের উত্তাল দিনগুলোতে মহানগর বিএনপি নিয়মিত কর্মসূচী পালন করত। এসব কর্মসূচীতে সবচেয়ে বড় মিছিল নিয়ে আসতেন কাউন্সিলর খোরশেদের নেতাকর্মীরা। দলীয় পদ পদবি না থাকলেও তার নেতাকর্মীরা বড় মিছিল নিয়ে কর্মসূচীর শুরুতে আসত এবং সবার শেষে যেত।
খেরশেদের ওয়ার্ডেরই জামতলায় আওয়ামীলীগের গডফাদার হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি একেএম শামীম ওসমানের বাড়ি। তবুও নেতাকর্মীদের নিয়ে সব সময় চাঙ্গা ও সরব থাকতেন খোরশেদ। দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ নিজ বাড়ির সামনে জিয়াউর রহমানের জন্ম বার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকীতে বিশাল দোয়া মিলাদ ও কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করে আসছেন তিনি।