বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

|

অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

নারায়ণগঞ্জে ১ থেকে ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৬:১২, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে ১ থেকে ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া আলোচিত ঘটনা

ফাইল ছবি

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ অবস্থায় ছিল নারায়ণগঞ্জের রাজপথ। ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ি থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ছাত্র জনতার পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

১৭ জুলাই দেশব্যাপী আন্দোলন যখন তুঙ্গে ঠিক সেই মুহুর্তে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ভার্চ্যুয়াল জগতে বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়৷ চালানো হয় গণ গ্রেপ্তার, হামলা মামলা, হত্যা। পুরো জুলাই এহেন অবস্থায় ১ আগষ্ট পর্যন্ত থমথমে অবস্থা বিরাজ করে নারায়ণগঞ্জে। ১ আগষ্ট থেকে পুনরায় নারায়ণগঞ্জে অগ্নিগর্ভ আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে।

১ আগষ্ট কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুষ্টিমেয় কিছু শিক্ষার্থী নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন। এসময় মোমবাতি প্রজ্জলন করতে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকজন আহত হন।

শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সর্বস্তরের মানুষ। ২ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের পাশাপাশি জালকুড়ি, সিদ্ধিরগঞ্জ, সাইনবোর্ড, মদনপুর এলাকায় রাস্থায় নেমে আসে ছাত্র জনতা। দিনভর জেলাজুড়ে গণমিছিল করেন তারা।

৩ আগষ্টের কর্মসূচিকে ঘিরে আগের দিন রাতে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে নানা রকমের হুমকি ধামকি দিতে শুরু করে ছাত্রলীগ। তবে এতে হিতে বিপরীত ঘটে। সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রানকেন্দ্র চাষাঢ়াসহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড় দখলে নেয় লক্ষ লক্ষ ছাত্র জনতা। ছাত্রলীগের হুমকির ঘটনা বিবেচনা করে এদিন শহরে ছাত্র জমায়েতের কিছু দূরে মিশনপাড়া এলাকায় শিক্ষার্থীদের রক্ষার্থে অবস্থান নেন বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর নেতৃত্বে অনেক শীর্ষ নেতারাও রাস্তায় নেমে আসেন সেদিন।

আগস্টের শুরু থেকে নারায়ণগঞ্জ শহর ছেয়ে যায় আন্দোলনকারীদের আঁকা আল্পনা ও গ্রাফিতিতে। ছাত্রজনতার ওপর গুলি চালানো নেতা শামীম ওসমান ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে একের পর এক দেয়াল লিখনে ছেয়ে যায় পুরো শহর।

এদিকে আন্দোলন দমন করতে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে ও শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের অফিসে জড়ো হন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে শিক্ষার্থী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিপুল জমায়েত দেখে সেদিন মাঠে নামতে সাহস পাচ্ছিল না ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। দুপুরের দিকে চাষাঢ়া এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে ছাত্র জনতা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়ায় পালিয়ে যায় তারা। পরবর্তীতে ক্ষুব্ধ জনতা শামীম ওসমানের অফিস হিসেবে খ্যাত শহরের রাইফেল ক্লাবে ভাংচুর চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে ছাত্র-জনতা।

৪ আগষ্ট দেশব্যাপী আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এই এক দিনেই আওয়ামী লীগ, ছাত্র-জনতা ও পুলিশসহ সারা দেশে শতাধিক মানুষ নিহত হয়। শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দিয়ে আন্দোলন দমন করার পরিকল্পনা থাকলেও এদিন জেলার কোথাও মাঠে দাঁড়াতে পারেনি আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। এদিন নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রতিটি এলাকা ছিল ছাত্র জনতার দখলে। দুপুর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাজপথে বের হতে ব্যর্থ হলে মাঠে নামে পুলিশ। এদিন শহরের নতুন কোর্ট এলাকা, সাইনবোর্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনভর ছাত্র জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষ চলে।

৫ আগষ্ট সকালেও নারায়ণগঞ্জ শহরে ছাত্র জনতার লংমার্চ ঠেকাতে চাষাঢ়া, সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের শক্ত অবস্থান ছিল। সকাল ১১টার দিকে ছাত্র জনতা লং মার্চে যোগ দিতে চাষাঢ়া এলাকায় জড়ো হতে শুরু করলে সংঘর্ষ বাঁধে ছাত্রলীগ যুবলীগের সাথে। এসময় ছাত্র জনতার ওপর মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে দেখা যায় ছাত্রলীগ যুবলীগ ক্যাডারদের ও পুলিশকে। একই সমায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভুঁইয়া সাজনু ও ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান সম্রাটের নেতৃত্বে ৫ তারিখ সর্বশেষ সশস্ত্র হামলা ও গুলি চালানো হয় ছাত্র জনতার উপর। এসময় ছাত্র জনতা রুখে দাঁড়ায়। পাশাপাশি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাত্র জনতাকে রক্ষায় ধাওয়া দেয় সন্ত্রাসীদের। এসময় ছাত্রলীগ যুবলীগের গুলিতে নারায়ণগঞ্জে সেদিন চাষাঢ়ায় মারা যান ছাত্রদল নেতা স্বজন। 

তবে দুপুর বারোটার পর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। তখনও ঘটনা সম্পর্কে কেউ কিছু জানে না। হঠাৎ অবস্থান ছেড়ে সরে যায় পুলিশ সদস্যরা। দুপুরের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর আসলে উৎসবের নগরীতে পরিনত হয় নারায়ণগঞ্জ। সর্বস্তরের মানুষ এই গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষী হতে রাজপথে নেমে আসে।

দুপুরের পর শামীম ওসমান বাড়ি, রাইফেলস ক্লাব, আওয়ামীলীগ কার্যালয়, নেতাকর্মীদের অফিসে ছাত্র জনতা ভাংচুর চালিয়ে ক্ষোভ মেটায়।

এসময় শুধু আওয়ামীলীগ নয়, পুরো জেলার প্রায় সকল থানার প্রায় অধিকাংশ পুলিশ সদস্য এমনকি পুলিশ লাইনের পুলিশ সদস্যরাও থানা ছেড়ে পালিয়ে যান। শুধু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়া ৫ তারিখ দুপুরের পর কোন পুলিশ সদস্যদের এমনকি ট্রাফিক পুলিশকেও দায়িত্বে পাওয়া যায়নি।  

দুপুরে বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা ৫ তারিখ থেকে পুলিশ সক্রিয় হবার আগ পর্যন্ত জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সরকারি বেসরকারি অফিস ও নগরী পাহারা দেয়ার কাজ করে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় তাদের উপাসনালয় ও বাড়িঘরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে বিএনপি।

আরো পড়ুন