বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

|

পৌষ ১১ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

অনুসারীদের নিয়ে বাস ভাঙচুর, চালককে মারধরের পর ‘ভিজিটিং কার্ড’ দিলেন বিএনপি নেতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২২:০১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অনুসারীদের নিয়ে বাস ভাঙচুর, চালককে মারধরের পর ‘ভিজিটিং কার্ড’ দিলেন বিএনপি নেতা

ফাইল ছবি

তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে তর্কাতর্কির জের ধরে নারায়ণগঞ্জে অনুসারীদের নিয়ে বাস ভাঙচুরের পর চালককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বাসযাত্রী এক সাংবাদিকও। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার ওই বাস চালকের নাম মো. নয়ন। তিনি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে আসিয়ান এসি বাস সার্ভিসের একজন চালক। অভিযুক্ত বিএনপি নেতা হলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। মারধরের শিকার বাসচালককে তিনি নিজের ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে গেছেন।

বাসচালক ও ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টায় ঢাকার গুলিস্তান থেকে যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয় আসিয়ান পরিবহনের বাসটি। রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় যানজটে গাড়ির সামনে হঠাৎ একটি মোটরসাইকেল এসে থামলে দ্রুত ব্রেক কষেন চালক। এতে গাড়িতে থাকা যাত্রীদের ঝাঁকুনি লাগে। এ নিয়ে ওই বিএনপি নেতা চালককে ধমক দেন। তখন চালক পাল্টা তর্ক জুড়লে বিএনপি নেতা চালককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে গাড়িটি সানারপাড় এলাকায় এলে আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষমাণ ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক গাড়িটির গতিরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে তাঁরা চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে এনে মারধর করেন।

চালক নয়ন বলেন, ‘তারা আমার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে এবং গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে। এ সময় গাড়ির ভাঙা গ্লাসে আমার মাথা কেটে যায়। পরে ওই যাত্রীর কাছে (বিএনপি নেতা) মাফ চেয়ে আমি নিস্তার পাই। মারধর করে যাওয়ার সময় তিনি তাঁর একটা ভিজিটিং কার্ড আমাকে দিয়ে গেছেন। বিষয়টা মালিকপক্ষকে জানিয়েছি। তারা যেটা বলবে, সেটাই করব।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আসিয়ান বাস কোম্পানির মালিকদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসিয়ান বাস পরিচালনার সঙ্গে বিএনপির লোকজন যুক্ত। ঘটনা ঘটাইছে আরেক বিএনপি নেতা। আমরা এ বিষয়ে থানা-পুলিশ করব না। নিজেরা মিলে মীমাংসা করে ফেলব।’

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়িচালক খুব বাজেভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল। আমি তাকে সাবধান করায় সে আমাকে বলে ‘‘আপনে আইসা গাড়ি চালান।’’ আমি সানারপাড়ে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে ওই চালক জবাব দেয় ‘‘এমন ফাঁপড় অনেকেই দেয়।’’ আমি তখন ফোনে আমার লোকজনকে সানারপাড় থাকতে বলি। ভাবনা ছিল চালককে কান ধরে ওঠবস করিয়ে ছেড়ে দেব। আমি কিছু করার আগেই আমার লোকজন চালকে মারধর করে। চালক তখন নিজের নানা পরিচয় দিচ্ছিল। আমি তখন আমার ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে নিজের পরিচয় দিয়েছি।’

এ সময় ভুলবশত তাঁর লোকজন একজন যাত্রীর গায়ে হাত দিয়েছেন বলে জানান এই বিএনপি নেতা। বিষয়টির জন্য তিনি ওই যাত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বলেও জানান।

হেনস্তার শিকার ওই যাত্রীর নাম মিনহাজ আমান। তাঁকে হেনস্তার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কর্মরত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশি জার্নালিস্ট ইন ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া (বিজেআইএম)’। বিবৃতিতে মিনহাজ আমানকে একজন ফ্যাক্ট–চেকিং সাংবাদিক উল্লেখ করে বিজেআইএমের আহ্বায়ন স্যাম জাহান ও সদস্যসচিব ফয়সাল মাহমুদ এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

মিনহাজ আমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চালক খুব বাজেভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল। তখন ওই বিএনপি নেতা চালকে ধমক দেন। আমিও চালককে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলি। চালক তখন বলে ওঠে ‘‘আপনারা আইসা গাড়ি চালান।” এ নিয়ে তর্কের জেরে ওই বিএনপি নেতা লোকজন নিয়ে গাড়িটি ভাঙচুরের পর চালককে মারধর করে। আমি তখন সেই নেতাকে বলি গাড়ির চালক তো কোনো দোষ করেনি। গাড়ি কেন ভাঙলেন? এ কথা বলায় তারা আমাকেও মারধর ও হেনস্তা করেছে।’

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে আমরা জেনেছি। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সূত্রঃ প্রথম আলো।